Friday, May 25, 2018

অপেক্ষা


কোন কোন রাত অকারনেই মন খারাপ করিয়ে দেয়। গভীর রাতে অসীম নিঃশব্দে মনের জানালায় উঁকি দিয়ে যায় পুরনো কোন স্মৃতি। মনে পড়ে শৈশবের হারিয়ে যাওয়া কোনো প্রিয়মুখ। হয়ত মনের গহীনে অভাব বোধ করি দূরে চলে যাওয়া কোনো এক প্রিয় বন্ধুকে। একদিন যে ছিল হাসি-আনন্দে-বেদনায় সবথেকে কাছের সঙ্গী, আজ সে সরে গেছে কতটা দূরে !
যার সঙ্গ পেয়ে আর যাকে সঙ্গ দিয়ে একদিন নিজের মানবজন্মকে সার্থক মনে হয়েছিল, যাকে বন্ধু ভেবে বন্ধুত্বের সংগা নতুন ভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলাম আনমনে, সেই প্রিয় মুখ আজ অনেক দূরে ! যাদেরকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধনী মনে হত, আজ তাদের থেকে কত দূরে সরে গেছি আমি !
স্মৃতি বড়ই আজব জিনিস। মনের গহীনে যেই স্মৃতি চিনচিনে ব্যাথার জন্ম দেয়, সেই স্মৃতিকে আমি সযত্নে লালন করি। ব্যাথা দিক,তবুও এগুলো সত্য। আকাশের জাজ্বল্যমান শুকতারার মত আমার মনের আকাশে চিরদিন থাকবে এই স্মৃতি। কখনো মনে হয় মিথ্যা এই আত্মসম্মানবোধকে তুচ্ছ করে ছুটে যাই। ভেঙে ফেলি দুরত্বের বাধা। উজাড় করে দেই নিজের সত্তাকে।উপভোগ করি বন্ধুত্তের সুধা। মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টিকর্তা আমাকে এত জেদী করে না বানালেই বোধহয় ভাল হোত। অন্তত নিজের জেদ এর থেকে নিজের মন কে বেশী গুরুত্ব দিতে পারার মত ক্ষমতা যদি থাকত !
প্রতিটা মানুষ সারাজীবন কিছুর জন্য অথবা কারো জন্যে অপেক্ষা করে_হয়ত সচেতনভাবে নয়, অবচেতনভাবে। অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের আর বেদনার। আমি জানিনা আমার অপেক্ষা অর্থহীন কিনা ! কেউ ই জানে না । আমার কোন ধারনা নেই আমি আমার বন্ধুকে যতটা মিস করি তার কাছাকাছি পরিমানেও সে আমাকে মনে করে কিনা । তবুও, একদিন যাকে আমি বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছি তার জন্যে অপেক্ষা করে যাব সারা জীবন। হয়ত কোনদিন আমি না পারলেও সে পারবে বন্ধুত্বকে পুনরজ্জীবিত করতে। অপেক্ষা করি সেইদিনের জন্যে। হয়ত কোন একদিন আবার আলো ঝলমল করে উঠবে আমার পৃথিবীতে। হয়ত, হয়ত কোন একদিন শেষ হবে এই অপেক্ষার।……

Monday, May 21, 2018

বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না


বাইরে আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। আকাশ থেকে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো টপটপ শব্দে পড়ছে, যেন এক কোমল মাধূর্যে ভরা অভূতপূর্ব কোন গানের সুর। চারদিক বারিধারার কোমল পরশে যেন জেগে উঠছে ধ্বংসস্তুপ থেকে। বৃষ্টির ভেজা স্বাদ আর মৃদুমন্দ হিমশীতল বাতাস মনকে টেনে নিয়ে যায় যেন ঐ দূরে কোথাও, মনে করিয়ে দেয় হরিয়ে যাওয়া দিনের কথা, ফিরিয়ে নিয়ে আসে হারানোর বেদনা।



আজ শ্রাবণ বৃষ্টি দেখছে। জানালার পাশে বসে সে তার দৃষ্টি বাইরে মেলে ধরে। অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারদিক। আলো বলতে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের সাদা আলো রাস্তাটাকে যা একটু আলোকিত করে রেখেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় অন্ধকারের বুক চিড়ে বৃষ্টির অনিয়মিত ফোঁটাগুলো চোখে পড়ছে।



শ্রাবণের কখনোই বৃষ্টি ভাল লাগতো না। তবে কোন এক কারনে আজ বৃষ্টির এই অনবরত ধারা তাকে টানছে। সম্মোহিতের মত সে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে, কিসের যেন এক অব্যক্ত ব্যাকুলতা তার নিকষ কালো চোখজোড়াকে টেনে ধরে রেখেছে বাইরে গভীর শূণ্যতার দিকে।



শ্রাবণ বাইরে তাকিয়ে আছে, এমন সময় তার কাঁধে কে যেন হাত রাখল। শ্রাবণ ঘুরে তাকালো, দেখলো তার বাবা দাড়িয়ে আছেন। শ্রাবণের বাবা চিন্তিত ভাবে প্রশ্ন করলেন,"কি রে মা? কি করছিস একা একা? তোর কি শরীর খারাপ?" "না বাবা", শ্রাবণ ছোট করে উত্তর দেয়।

শ্রাবনের বাবা বলেন,"তাহলে নিশ্চই তোর মন খারাপ, না হলে তুই এভাবে জানালার পাশে বসে আছিস কেন?"

"না বাবা, আমি ঠিক আছি।"

"কাল তোর ক্লাস আছে না?"

"হ্যা বাবা"

"ঘুমিয়ে পড় তাহলে, রাত করিস না মা।" বলে শ্রাবণের বাবা প্রস্থান করেন।

"ঠিক আছে বাবা", বলে শ্রাবণ হালকা করে মাথা নাড়ে।



বাইরে এবার ঝম ঝম শব্দে বৃষ্টি নেমেছে। খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছিটাফোঁটা ভেতরে এসে শ্রাবণকে ভিজিয়ে দিচ্ছে, শ্রাবণের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। বাইরের এই মাতাল হাওয়ার হিমশীতল পরশ তার স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলছে। শ্রাবণ স্মৃতির খাতা খুলে বসে, ডুব দেয় সময়ের স্রোতের অতীতে.......



শ্রাবণ রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাটছে, এমন সময় ডাক শুনে সে পেছনে ঘুরে তাকায়। একটা ছেলে, পরিচিত মুখ, ঘন চুল, হাস্যজ্জল চোখ। ছেলেটা শ্রাবনের কাছে এসে বলে," তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?" " করো, সমস্যা কি? প্রয়োজনে দুইটা প্রশ্নও করতে পারো।" বলে শ্রাবণ হেসে ফেলে। ছেলেটাকে বিব্রত দেখায়। তারপর সময় নিয়ে বলে,"তোমার কি বৃষ্টি পছন্দ?" শ্রাবণ আবার শব্দ করে হেসে ফেলে। তারপর কঠিন গলায় বলে,"নাহ! একদম না! বৃষ্টি আমার একদমই পছন্দ না। বর্ষাকাল তো নয়ই, সারাদিন কি খালি পানি পানি আর পানি! কি বিশ্রি!" ছেলেটাকে কিছুটা অপ্রস্তুত দেখায়, হয়তো সে এমন উত্তর আশা করে নি। শ্রাবণ বলে,"তোমার কি বৃষ্টি পছন্দ?" ছেলেটা কিছু না বলে একটু হেসে মাথা নাড়ে।



বাইরে বৃষ্টির সাথে সাথে দমকা বাতাস খেলা করতে শুরু করেছে। শ্রাবণের একটা গানের কলি মনে পড়ছে,"বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না........." কেন এই গানটা মনে আসছে তা সে জানে না। শ্রাবণের আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,"আমি বৃষ্টি ভালবাসি, আমি বৃষ্টি ভালবাসি, আমি বৃষ্টি ভালবাসি..........." এ কথা শোনার জন্য যে কেউ নেই এখন।

শ্রাবণ আবার স্মৃতির অতল সাগরে ডুব দেয়।



রাত প্রায় একটা বাজে, মোবাইলের বাজনায় তার ঘুম ভেঙে যায়। শ্রাবণ মোবাইলটা কানের পাশে ধরে ঘুম জড়ানো গলায় বলে,"হ্যালো?"

অপর দিক থেকে ছেলেটার গলা শোনা যায়,"ঘুমিয়ে পড়েছ?"

শ্রাবণ বলে,"নাহ, এইতো চোখ লেগে এসছিলো আর কি! কি ব্যাপার? তুমি এত রাতে?"

ছেলেটা বলে,"বাইরে দেখ কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে! হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরে দেখ, সব দুঃখ ধুয়ে যাবে।"

শ্রাবণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, তাই তো বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। শ্রাবণ ফোনে বলে," এই কথা বলার জন্য তুমি এত রাতে কল দিয়েছো?"

ছেলেটার কিছু বলে না।

"যত সব পাগলামী, তুমি থাকো তোমার পঁচা বৃষ্টি নিয়ে, আমি ঘুম দিলাম" বলে শ্রাবণ লাইনটা কেটে দেয়, তারপর সে বৃষ্টি দেখতে বসে।



শ্রাবণ বাস্তবে ফিরে আসে। শ্রাবণের অনেক সময় কেটেছে ছেলেটার সাথে। সুখের স্মৃতি, দুঃখের সৃতি, কত স্মৃতি। অতীতের স্মৃতিগুলো তার এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। বাইরে বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। শ্রাবণ উঠে দাড়িয়ে জানালার গ্রিল দুই হাতে আকড়ে ধরে। না বলা কথা গুলো মনে ভীড় করছে। অভিমানে মনটা ভারী হয়ে পড়ছে। এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নেয়, রিসিভ করে কানে দিতেই অপর দিক শ্রাবণের বান্ধবী তান্নির গলা শোনা যায়," শ্রাবণ শোন, কালকে ক্লাস ক্যানসেল বুঝলি? আসলে এমন একটা ঘটনার পর কি ক্লাস হয় বল? কাল আমরা সবাই শোক পালন করব, সকাল সকাল আসিস কিন্তু।" শ্রাবণ ক্ষিণ স্বরে বলে,"ঠিক আছে" বলতে গিয়ে তার গলাটা ধরে আসে। তান্নি বলে,"তোর কি মন খারাপ রে শ্রাবণ?" শ্রাবণ ধরা গলায় বলে,"নাহ" তান্নি বলে,"মন খারাপ করিস না রে। মানুষর জীবনটাই এমন, কে কখন চলে যাবে ................"



বাইরের বৃষ্টিটা ধরে আসা বৃষ্টির তোড়টা আবার বাড়তে শুরু করেছে। হু হু শব্দে বয়ে চলা বাতাস বৃষ্টির সাথে মিলে গিয়েছে। শ্রাবণ আবার ভাবনায় তলিয়ে যায়। অনেক কথা বলার ছিল তার, অনেক কথা........ কথা গুলো কি তবে না বলাই রয়ে গেল? বৃষ্টির অঝড় ধারাটা শ্রাবণের কাছে কেন যেন কান্নার মত ঠেকে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানির পরশ নেয়। আশা করে বৃষ্টি তার দুঃখ ধুয়ে নিয়ে যাক। জানালার গ্রিলে শ্রাবণ মুখ রাখে। তার মুখে বৃষ্টির ফোটা এসে পরতে থাকে। শ্রাবণের অশ্রুধারা আর বর্ষার জল এক হয়ে মিশে যায়। অশ্রুমালা আর অঝোর ধারা, দুটো এক হয়ে ঝরতে থাকে।

আজ বাইরে বৃষ্টি নেমেছে অঝোর ধারায়। তারও কি কোন না বলা কথা রয়ে গেছে?

Sunday, May 20, 2018

ধর্ষণ

(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

মুন্নির অনুরোধ ফেলতে পারে না মালা। প্রিয় বান্ধবীর ছোট্ট অনুরোধ কী করেই বা ফেলে। এতকরে বলছে যখন, আজ রাতে থাকবে ওদের বাসায়। তা ছাড়া স্কুলের আরও বান্ধবী শেলী, মুক্তা আসবে। সারা রাত আড্ডা দিবে। সকালে স্কুলে না গিয়ে ফাঁকি দিবে। সিনেমা দেখবে।
অনেক দিন পর বান্ধবীরা সব এক হবে। উপরে উপরে মালা আমতা আমতা করলেও ভিতরে সে বেজায় খুশি। বাবাকে রাজি করাতেই হবে। বকা খেলে খাবে। তবুও মুন্নির বাসায় আড্ডাটা ছাড়া যাবে না। মুন্নি সেই দুপুরে এসে বলে গেছে।




নানা কিছু ভেবে মালা তার বাবাকে রাজি করাল। সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে গেল মালা। মুন্নিদের বাসার কাছেই। হেঁটেই পৌঁছে গেল। কিরে মুন্নি! মুক্তা শেলী এখন তো আসল না! রাত তো অনেক হলো। কখন আসবে ওরা। মালার এমন প্রশ্নে থতমতো খায় মুন্নি। বলে, কী জানি বুঝতে পারছি না। কেন যে আসল না। থাক, না আসলেই বা কী। দুই বান্ধবী মিলে আড্ডা দিব। কতদিন একসঙ্গে বসে দুটো কথা বলিনি।



আয় আমরা ভাত খেয়ে নেই। তারপর রুম আটকে আড্ডা দিব। রাত তো ১০টা বেজে গেল। মুন্নির এমন কথাবার্তায় বিরক্ত মালা। প্রকাশ করে না। সব কাজ শেষে রাত ১১টায় রুমে গিয়ে দুজনে কথা বলতে থাকে। মুন্নি তার জীবনের কিছু অজানা কথা বলতে বলতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়।



মালার মন খারাপ হয়। ভাবে, উপর থেকে মানুষ বোঝা যায় না। মুন্নির ভিতরে এত কষ্ট বোঝা যায়নি। মুন্নির জন্য মায়া হয় তার। হঠাৎ মুন্নি বলে, চল আমরা বাড়ির বাইরে যাই। খোলা মাঠটায় গিয়ে বসি। মালা বলে, এত রাতে কীভাবে? কিছু হবে না— অভয় দেয় মুন্নি। মুন্নির এই মনের অবস্থার মধ্যে তার কথা ফেলতে পারে না। দুজন বাসা থেকে বেরিয়ে মাঠটায় গিয়ে বসে। অন্ধকার চারদিক। সামনে কিছু দেখা যায় না।



রাত তখন ১২টা। দুজন কথা বলছে। মুন্নি কেমন যেন করছে। আশপাশ মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কী রে, কিছু খুজছিস নাকি মুন্নি? মালার প্রশ্নে সম্ভিত ফিরে পায় মুন্নি। কই কিছু না তো! কী আবার খুঁজব? কেমন যেন রাগ হয়ে পালটা প্রশ্ন মুন্নির। মালা হতবাক।



ঠিক ওই সময়েই অন্ধকারের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসল তিন যুবক। মুন্নির ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ায়। বুক কেঁপে ওঠে মালার। এই আপনারা কারা? কী চান এখানে? মালা প্রশ্ন রাখে। মুন্নি এবার পেছন ঘুরে তাকায়? কিন্তু কিছু বলে না। যুবকদের চেহারা অন্ধকারের মধ্যে চেনা যাচ্ছিল না।



কিন্তু মুন্নির চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছে। ওর মুখে হাসি। যে হাসির সঙ্গে পরিচয় নেই মালার। ভয় পায় মালা। কী রে মুন্নি, কথা বলছিস না কেন? মুন্নি মুখ খোলে। বলে, আরে তুই চিনিস না! ভালো করে তাকিয়ে দেখ, চিনবি। মালা আবার ভালো করে তাকায়! কী ব্যাপার চিনতে পারছ না!



এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলা! তিনজনের একজন কথা বলে। মালা এই কণ্ঠটা চেনে। আঁতকে ওঠে মালা। তাহলে কী ও হারুন। যে কিনা তাকে কয়েক বছর ধরে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু সে তো তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে বলেও ভয় দেখিয়েছে।



তবে কী মুন্নি বিপদে ফেলতে চাইছে তাকে? মালা ভয় পায়। মালা উঠে দাঁড়ায়। যুবকটি এবার মালার সামনে এসে দাঁড়ায়। হ্যাঁ সেই তো! হারুন! সঙ্গে বুলেট আর জুয়েল। এখন কী করবে! চারদিকে অন্ধকার। দৌড় দিবে! যদি আশপাশের লোকজন চলে আসে, সেটিও কেলেঙ্কারি হবে।



ভাবছে মালা এমন নানা কথা। মুন্নির হাত ধরে মালা। কিন্তু ছাড়িয়ে নেয় মুন্নি। মুন্নি বলে,”হারুন আমার কাজ শেষ। তুমি তোমার জিনিস বুঝে পেয়েছ? এবার আমি যাই। ঘুম পাইছে আমার।”হারুন বলে, ওকে, তুমি যাও। আমার হিসাব আমি নিব!



এমন কথাবার্তায় মালার কান্না আসে। মুন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারছে না। মুন্নি নিজের বাসার দিকে হাঁটতে থাকে। মালা দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে। জাপটে ধরে ফেলে হারুন। মুখ চেপে ধরে। তারা মালাকে নিয়ে যায় পাশের একটি নির্জন পুকুরপাড়ে।



হারুন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। মালার জবাব, রাজি না। ক্ষুব্ধ হয় হারুন। সেখানেই তিনজনে মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে মালাকে। চিত্কার করায় তার মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়। রক্তাক্ত মালা তখন বলে, সব কথা বলে দিবে সে। থানা পুলিশ করবে। কাউকে ছাড়ব না।



এ কথা শুনে হারুন আরও ক্ষুব্ধ। শিমুল গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে মালাকে বেঁধে ফেলে। এরপর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ধর্ষকরা। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে মালার গগন বিদারি চিত্কার আশপাশের লোকজনের কানে পৌঁছে যায়। ছুটে আসে লোকজন, আসে মালার বাবা। ততক্ষণে লাপাত্তা তিন ধর্ষক।



মালাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু পরদিন মারা যায় মালা। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রংপুরের সদর উপজেলার পালিচরা গ্রামে মধ্যযুগীয় কায়দায় ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয় মালাকে। তার বাবা দিনমজুর মজিবর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় সাতজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।



পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানতে পারে মুন্নির কথা। গ্রেফতার করে মুন্নিকে। বসানো হয় থানার টেবিলের সামনে। জেরা শুরু। কিন্তু মুন্নি তার বান্ধবী মালাকে চেনে না বলে দাবি করে। কিন্তু জেরার মুখে আর কতক্ষণ অস্বীকার করে থাকবে মেয়েটি। যখন বলা হলো, স্বীকার করলে তাকে মামলায় জড়াবে না,



তখনই সব ফাঁস। ঘটনার আদ্যোপান্ত বলে দেয়। হারুনের অনুরোধ রাখতেই মালাকে সে তার বাসায় আসতে বলে। এখন পুলিশ খুঁজতে থাকে হারুন, বুলেট আর জুয়েলকে। কিন্তু ওরা তো লাপাত্তা। পাওয়া যায় না কোথাও। পুলিশ চেহারাও চিনে না।



বিভিন্ন জায়গায় সোর্স নিয়োগ করে পুলিশ। বেশ কিছুদিন পর পুলিশের কাছে খবর আসে, হারুনকে দেখা গেছে পাশের একটি গ্রামের বাজারে। পুলিশ ছুটে যায়। কিন্তু কে হারুন! বিরাট একটা সমস্যায় পড়ে পুলিশ। কাকে ধরবে? অনেক লোকজন সেখানে।



চেহারার সঙ্গে মিল পাচ্ছে না কারও। এক সোর্স খবর দিল, হারুনের একটা বদঅভ্যাস আছে। মাথা একটু পর পর ডান দিকে ঝাঁকায়। পুলিশ তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। হোটেলের একটা চেয়ারে বসা যুবকের দিকে লক্ষ্য করে। সন্দেহ হলেও এই যুবকের দাড়ি গোঁফ আছে। কিন্তু হারুনের ছিল না। হঠাৎ মাথা ডান দিকে ঝাঁকাচ্ছে! পুলিশ তখন উত্তেজনায়। আরে পাওয়া গেছে শিকার। যুবকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চল, আর খেতে হবে না।



খেয়েছিস অনেক। দাড়ি গোঁফ রেখেছিস, তোর বদঅভ্যাস পাল্টাতে পারিসনি। বলে পুলিশ। যুবকটি আসতে চায় না। হ্যান্ডকাফ পরিয়ে সোজা থানায়। এরপর ছোটদের নামতার মতো পুরো ঘটনা পুলিশ বলে যায় হারুনকে সামনে বসিয়ে। অস্বীকার করার কোনো আর পথ থাকে না। তার দেওয়া তথ্যে পাওয়া যায় বুলেটকে। কিন্তু অধরা জুয়েল। ২০০২ সালের অক্টোবরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত এই তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেয়। আর মুন্নিকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন দণ্ড।

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা

"এক জাতি, এক ভূমি"- এই চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একদা যে মুসলিম উম্মাহ্‌ পরিণত হয়েছিল বিশ্বের প্রভাবশালী সভ্যতায় সেই একই ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ