Wednesday, May 20, 2020

মিল্লাতে ইবরাহিমের জাগরণ " বইয়ের পিডিএফ


বইয়ের নাম : মিল্লাতে ইবরাহিমের জাগরণ ।
বইয়ের মূল নাম : দিফায়ে মিল্লাতে ইবরাহিম ।
গ্রন্থনা : শাইখ মুদ্দাসসির আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আরশাদ লুধি রাহ.
অনূবাদক : মাওলানা আলী হাসান উসামা । 
নির্ধারিত মূল্য : ৯৫ টাকা ।
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৮৯
প্রকাশনী : বইকেন্দ্র ।
‘ মিল্লাতে ইবরাহিম ‘ । ইসলামের একটি বহুল গুরুত্বপূর্ণ , মৌলিক ও আক্বীদার অংশ , যার আলোচনা কোর’আনে উঠে এসেছে বহুবার ! স্বয়ং মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ও কোর’আনে শ্রেষ্ঠ উম্মাহ হিসেবে আখ্যায়িত হওয়া তার উম্মাহকে এই ‘মিল্লাতে ইবরাহিম‘ অনুসরন করতে বলা হয়েছে । এই মিল্লাতে ইবরাহীমের খাসিয়ত কী যার কারণে তাকে কোর’আনে ও সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ ‘তে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো জানার জন্যই বইটি পড়া ।
বইটির শুরু হয়েছে তাগুতের সাথে ‘ সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা ‘ দিয়ে যা মিল্লাতে ইবরাহিমের অন্যতম দাবি । অতপর , অনুবাদক কর্তৃক লিখিত ‘ ভূমিকা ‘ যা ৯-২৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তৃত । এই ভূমিকাটি বইটিকে বিন্যাসিত আকারে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে । বইটির মূল উদ্দেশ্য ও কার্যবিবরনী এই ভূমিকাতে খুলে খুলে বলা হয়েছে । এই ভূমিকায় আলোচনা করা হয়েছে ,
১| দীন , মিল্লাত এবং শরিয়তের পার্থক্য ।
২| মিল্লাতে ইবরাহীম নিয়ে আলোচনা কেন প্রয়োজন।৩| মিল্লাতে ইবরাহিমের পরিচয় ।
৪| শুধু মিল্লাতে ইবরাহিম অনুসরণের নির্দেশ কেনো ।
৫| মিল্লাতে ইবরাহিমের মূল বৈশিষ্ঠ্য ।
বইটিকে মূলত আমি ২ ভাগ করে পড়েছি ।
• মিল্লাতে ইবরাহিম নিয়ে বিভিন্ন ধরণের ত্রুটি-বিচ্যুতি , সংশয় ও অপব্যাখ্যার জবাব ।
• মিল্লাতে ইবরাহিমের সঠিক নির্দেশনা , সঠিক পরিচয়, এর উপর টিকে থাকা ও প্রতিষ্ঠাকরণের সঠিক পথ ।
অতপর , লেখক আলোচনা করেছেন এরূপ কয়েকটি পয়েন্ট সবিশেষ উল্লেখ করা হলো ,
১| কিতাব এবং সুন্নাহর মানহাজ।
২| কিতাব ও সুন্নাহর পথ থেকে বিচ্যুতি ।
৩| মিল্লাতে ইবরাহিমের বিবরণ ।
এখানে , তিনি বলেন , মিল্লাতে ইবরাহিম দুটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ;
(ক) ইবাদাতকে একমাত্র আল্লাহ’র জন্য একনিষ্ঠ করা ।
(খ) শিরক এবং মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং প্রকাশ্যে তাদের সঙ্গে শত্রুতার ঘোষণা দেওয়া ।
৪| মিল্লাতে ইবরাহিম মানুষের মধ্যে পার্থক্যকারী ।
এখানে লেখকের মন্তব্য হলো , মিল্লাতে ইবরাহিমের একটি দিক যে , মুশরিকদের থেকে পৃথক হওয়া তথা গোটা জগতবাসী থেকে পৃথক হওয়া এবং এই দিকটি বাস্তবায়ন করা ব্যাতীত এই দ্বীন ইসলাম বিজয়ী হতে পারে না ।
৫| মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুধাবন এবং মিল্লাতে ইবরাহিম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভ্রান্তি ।
এই পয়েন্টটি খুব গুরূত্বপূর্ণ ও এখানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তিনি সেসব লোকদের বক্তব্য ও কর্ম বয়ান করেছেন ও তাদের দাবির অসারতা তুলে ধরেছেন যারা এই বিষয়টির উপর সংশয়বোধ করে যেমন ,
* কিছু লোক বলে , দ্বীন প্রতিষ্ঠার মূলভিত্তি হলো কবরপূজারী , বিদআতি ও তাসাউফপন্থিদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করা
* আরেকদলও অনুরূপ বিশ্বাস লালন করে ও মাযহাবকেন্দ্রিক বিবাদে লিপ্ত থাকে ।ইত্যাদি ।
৬| মিল্লাতে ইবরাহিম প্রতিষ্ঠার সঠিক পদ্ধতি ।
৭| তোষামোদি এবং নিরবতা অবলম্বনের দ্বারা দ্বীন কায়েম হয়না , বরং দ্বীন কায়েমের সঠিক পন্থা হলো , প্রকাশ্যে সত্যের ঘোষণা দেওয়া এবং বিপদাপদ ও কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করা ।
৮| মুক্তিপ্রাপ্ত দলের কিছু বৈশিষ্ট্য ।
৯| অগ্রহণীয় অজুহাতসমূহ ।
সকল গোষ্ঠী তিনটি বিষয়কে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায় ,
(ক) সদস্য সংখ্যার স্বল্পতা ।
(খ) বস্তুগত প্রকৃতির অবিদ্যমানতা ।
(গ) শত্রুর সংখ্যাধিক্য , ভয়ানক অস্ত্রশক্তি ও অসাধারন রণপ্রস্তুতির সামনে টিকতে না পেরে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা ।
আসলেই , বর্তমানে মডারেট মুসলিমরা এরকম অযুহাতই পেশ করে যা পূর্ববর্তী যামানায় মক্কার মুনাফিকরা বলতো । তিনি এখানে এসকল কুযুক্তির খন্ডন করেছেন , কোর’আন ও হাদীসের আলোকে ।
১০| সত্যপ্রতিষ্ঠার পথে অবশ্যপালনীয় কিছু নির্দেশনা ।
তিনি বলেন , “ সত্য প্রতিষ্ঠার পথে কোর’আন এবং সুন্নাহয় বর্ণিত বিধিবিধান , আদেশ-নিষেধ এবং পালনীয়-পরিত্যাজ্য বিষয়গুলোর প্রতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লক্ষ্য রাখা এবং পরিপূর্ণ আনুগত্য অবলম্বন করে প্রত্যেক অবাধ্যতা থেকে বেচে থাকা জরুরি ।”
জালিমদের ক্ষেত্রে ,
শাইখের ভাষায় ,
মানুষ ৩ ভাগে বিভক্ত হয় ,
(ক) প্রথম দল শান্তি-সন্ধি প্রতিষ্ঠা , মৌনতা অবলম্বন ও তাদের সাথে শত্রুতা না করার দা’ওয়াত দেয় । এটা সুন্নাহ বিরোধী ।
(খ) দ্বিতীয় দল ত্বড়িৎ অহস্থান গ্রহন করে এবং লড়াইয়ের ঘোষণা দেয় , তবে তারা বাতিলপন্থিদের সমাজেই অবস্থান করে ।
(গ) তৃতীয় দল সদা সর্বদা ত্য কথা বলে , তারা সত্যের পথে জীবনেৎসর্গকারী ও এরা ভীরুতা প্রদর্শন করেনা ।
১১| সত্য প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধক কিছু সংশয় ।
এখানে লেখক সীরাতের কিছু অংশ বর্ণণা করেছেন , বিশেষত হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা ও সূরা আনফালের ৬১ নং আয়াত নিয়েও কিছু দ্বীনদরদীদের অপব্যখ্যার সঠিক ও সমুচিত জবাব দিয়েছেন যেগুলো দ্বারা কাফির মুশরিকদের সাথে তারা সমযোতার দলিল পেশ করতো।তিনি এখানে ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন কখন তাদের সাথে সন্ধি করা যাবে আর কখন করা যাবেনা ।
১২| এক মরদে মুমিনের স্মরণ ।
এই পরিচ্ছদে ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহ. কে নিয়ে শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু জামিল গাজি’র কিছু আবেগময়ী কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।
১৩| পুনশ্চ ।
অতপর , একজন ভাইয়ের কবিতার মাধ্যমে বইটির পরিসমাপ্তি ঘটেছে ।
আমাদের মধ্যাকার অনেকেই আছেন , দ্বীন পালনে আগ্রহী ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে যথেষ্ঠ সচেতন; তাদের সকলের উচিত ‘ মিল্লাতে ইবরাহিম ‘ এর উপর শাইখ মুদ্দাসসির আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আরশাদ লুধি রাহ. রচিত ‘ দিফায়ে মিল্লাতে ইবরাহিম ‘ এর সহজ-সরল এই গ্রন্থনাটি পড়া , অনুধাবন করা যা মাওলানা আলী হাসান উসামা কর্তৃক অনূদিত হয়েছে অত্যন্ত প্রান্জল ভাষায় যা সহজেই বোধগম্য ।
আসলে , বইটির প্রচ্ছদ ,বাধাই , পেইজ সবকিছুই খুব ভালো । সর্বোপরি , বইটির অনুবাদ , ভাষা খুবই সুন্দর হয়েছে যা সত্যিই খুব হৃদয়গ্রাহী ।
বইটি পড়ে আমরা জানতে পারবো কেনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে , আমাদেরকে মিল্লাতে ইবরাহিমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কথা বলা হয়েছে ? শুধু ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের অনুসরণ করার রহস্য কী ? আমরা কীভাবে মিল্লাতে ইবরাহিমের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারি ? ইত্যাদি ।
আরেকটা বিষয় , মিল্লাতে ইবরাহিমের সাথে যেকোনভাবেই হোক আমরা সকলেই কিছুটা পরিচিত আছি । কিন্তু , এতদসত্বেও আমাদের এই জানাশোনা মিল্লাতে ইবরাহিমের হক আদায়ে ব্যার্থ ।যদিও মিল্লাতে ইবরাহিম শুধু জানাশোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে তা প্রায়োগিক দিকে বিশ্বাসী । মিল্লাতে ইবরাহিম আমাদের আক্বীদা , দ্বীনের পথে অটল অবিচল থাকার এ এক বিরাট শিক্ষা । কিন্তু , পরিতাপের বিষয় এর উপর আলাপ-আলোপন ও বই হাতেগোনা যা মিল্লাতে ইবরাহিমের পরিচিতি ও প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে অতি নগন্য । এক্ষেত্রে , মাওলানা আলী হাসান উসামা’র অনূদিত ও বইকেন্দ্রের প্রকাশীত এই বই সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে ।
আল্লাহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কবুল করুন ও এর বরকতে তিনি আমাদের সকলকেই ‘ মিল্লাতে ইবরাহিম ‘ সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করার এবং নিজেদের জীবনে , সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার তাওফীক এনায়েত করুন । আমীন ।

No comments:

Post a Comment

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা

"এক জাতি, এক ভূমি"- এই চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একদা যে মুসলিম উম্মাহ্‌ পরিণত হয়েছিল বিশ্বের প্রভাবশালী সভ্যতায় সেই একই ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ