Friday, June 22, 2018

আলোচিত অভিনেত্রী হ্যাপি যেভাবে 'আমাতুল্লাহ' হলেন





ছবির কপিরাইটSTR
Image captionবইয়ে হ্যাপি বলেছেন যে তার নতুন শিশুর মতো জন্ম হয়েছে, আগের জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই"।

বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে চিত্রনায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপি আলোচনায় এসেছিলেন।
ওই ঘটনার প্রায় দুই বছর পর আবারো চিত্রনায়িকা হ্যাপি আলোচনায় আসছেন, তবে পটভূমি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
মাকতাবাতুল আজহার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত 'হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহ' এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি এখন যোগাযোগ মাধ্যমে জায়গা করে নিচ্ছেন।
সাক্ষাৎকারধর্মী এই বইটি লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও তাঁর স্ত্রী সাদিকা সুলতানা সাকী।
বইটির সহ-লেখক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বিবিসি বাংলার ফারহানা পারভিনকে বলেন, প্রায় ছয়-সাত মাস আগে একবার ফেসবুকে ওয়ালে হ্যাপি পোস্ট করেছিল যে তার জীবনকথা নিয়ে সে বই প্রকাশ করতে চায়, কেউ কি সেটা ছাপবে?
"হ্যাপির ফ্রেন্ডলিস্টে সব মেয়ে থাকায় আমার স্ত্রীর মাধ্যমে তাকে বলি যে আপনি যদি লেখেন তাহলে আমরা ছাপবো। এরপর সে লেখা শুরু করে"- বলেন মি: ফারুক।
কিন্তু এক পর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হ্যাপির ইচ্ছাতেই সাক্ষাৎকারধর্মী এই বই লেখাতে উদ্যোগী হন দুজনেই।
মি: ফারুকের ভাষায় অভিনেত্রী হ্যাপি এখন পুরোপুরো বদলে গেছেন এবং যেভাবে চলেন সেটা তাদের অবাকও করেছে।
"সে বিয়ে করেছে সংসার হয়েছে, আট মাস হয়ে গেছে। নায়িকার জীবন সে পার হয়ে এসেছে সেটা সেও বলেছে"।
মাকতাবাতুল আজহার প্রকাশনী থেকে বের হওয়া 'হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহ' বইয়ের মূল বিষয়বস্তু কী?
এই বইয়ের মধ্যে একশো চারটা প্রশ্ন আছে বলে জানান মি: ফারুক।
তিনি জানান, অভিনেত্রী হ্যাপির "শৈশব, তারুণ্য, অভিনয়, মডেলিং, জীবনের উত্থান কখন ছিল বা ধাক্কাটা কিভাবে আসলো। এরপরে সে কিভাবে নামাজি ও পর্দানশীল হলো সে সব বিষয় উঠে এসেছে এই বইয়ে"।
তবে যে কারণে হ্যাপি সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এসেছিলেন সেই বিষয়টি এই বইয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
"সে আমাকে বললো এটা আমার জীবনের ভুলে যাওয়া অধ্যায়। আমার সংসারে এ নিয়ে কথা উঠে না। আমি চাই না এটা বইয়ে থাকুক" আর এ কারণেই ক্রিকেটারের সঙ্গে সম্পর্কের কথা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান মি: ফারুক।


হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ বইয়ের প্রচ্ছদছবির কপিরাইটঅভিনেত্রী হ্যাপির ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া
Image caption'হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ' বইয়ের প্রচ্ছদ

হ্যাপির পরিবর্তনের কারণ কী?
"সে বলেছে একটা সিনেমার মাধ্যমে তার পরিবর্তন হয়েছে। সে ইউটিউবে ভিডিও দেখতো , সিনেমা দেখতো। হ্যাপির ভাষ্য ইরানি একটা সিনেমা দেখে সে দ্বীনের পথে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়"- বলেন মি: ফারুক।
গ্ল্যামার জীবন নিয়ে বর্তমান সাংসারিক জীবন নিয়ে হ্যাপি অনেক খুশী বলেই লেখককে জানিয়েছেন তিনি।
'হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহ' বই বিষয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি-ও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মাকতাবাতুল আজহার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ এএফপিকে বলেছেন বইটি নেয়ার জন্য গ্রাহকেরা ভিড় করছে কারণ সবাই জানতে চায় হ্যাপি অভিনয় জীবন ছেড়ে কেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী হয়ে উঠলেন?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত ঢালিউডের নায়িকা ছিলেন নাজনিন আক্তার হ্যাপি।
২০১৩ সালে 'কিছু আশা কিছু ভালোবাসা' নামের একটি বাংলা সিনেমায় প্রথম অভিনয় করে খ্যাতি পান তিনি।
কিন্তু ২০১৪ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি করেন হ্যাপি।
বার্তা সংস্থা এএফপির ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হ্যাপি নিজের নাম দিয়েছেন আমাতুল্লাহ, তিনি বোরকা পরা শুরু করেছেন।
আরো বলা হচ্ছে যে "বইয়ে হ্যাপি বলেছেন যে তার নতুন শিশুর মতো জন্ম হয়েছে, আগের জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই"।
সূত্রে: বিবিসি

Wednesday, June 20, 2018

ইঁদুর কুচিকুচি করল এটিএম বুথে রাখা সাড়ে ১২ লাখ টাকা!


স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ ওঠানোর যন্ত্রে (এটিএম) রাখা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রুপি কেটে ফেলেছে ইঁদুরের দল। ভারতের আসাম রাজ্যের তিনসুকিয়া জেলায় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার একটি এটিএম বুথে এ ঘটনা ঘটেছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, তিনসুকিয়ার লাইপুলি এলাকায় একটি এটিএম বুথ কয়েকদিন ধরেই নষ্ট ছিল। গত ১১ জুন স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কারিগরি দল বুথটি ঠিক করতে আসে। এসে দেখে বুথে থাকা ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট কেটে তছনছ করেছে ইঁদুরের দল। এতে ওই এটিএমটিতে রাখা ১২ লাখ ৩৮ হাজার রুপি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে ওই এটিএমে রাখা সব অর্থ নষ্ট করেনি ইঁদুর। ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা রক্ষা পেয়েছে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে।
এদিকে ঘটনার পরে গত সোমবার স্থানীয় সাংবাদিক নন্দন প্রতিম শর্মা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে দেখা যায়, এটিএম বুথে থাকা অর্থের অনেকগুলোই কেটে ফেলেছে ইঁদুর। আর সেই কেটে ফেলা অর্থ নিয়েই আলোচনায় মেতেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

Sunday, June 17, 2018

খেলার নামে শুরু হলো ,এ কোন খেলা!!


আবু তাহের মিসবাহ; সুস্থ, স্বাভাবিক ও 
সুন্দর জীবনটাই যেনো বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে
এখন খেলা, শুধু ব্যক্তির জীবন নয়; দেশ ও
 সমাজের এবং জাতি ও মানবজাতিরও জীবন!
-
একসময় বলা হতো খেলাধূলা। কেনো বলা
 হতো? মাঠে খেলতে গেলে ধূলা ওড়ে এজন্য?
 কিংবা গায়ে ধূলা লাগে? কিন্তু কেউ কি
 কল্পনাও করেছিলো কখনো, খেলার ধূলা 
এবং ধূলিঝড় এভাবে অন্ধকার করে দেবে 
জীবন? জাতি ও মানবজাতির জীবন!
-
একজন ছাত্র যদি রাত জাগে পড়ার জন্য নয়, 
খেলার জন্য! না, খেলার জন্য নয়, শুধু খেলা
 দেখার জন্য! তাহলে শিক্ষার আলোতে
কীভাবে আলোকিত হতে পারে তার জীবন! 
জ্ঞানের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে টিভি-স্ক্রিনের 
আলো কি উজ্জ্বল করতে পারে কারো ভবিষ্যত?
-
একজন ছাত্র, হোক সে বিদ্যালয়ের, 
বিশ্ববিদ্যালয়ের, এমনকি – – – হাঁ, লজ্জার 
সঙ্গে বলছি, এমনকি হোক সে মাদরাসার ছাত্র, 
এখন সে জানতে চায় না জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ
 তথ্য! কোনো বিষয়ের উপর প্রকাশিত গ্রন্থের
 সর্বশেষ তালিকা। !
এখন সবার আগে সে জানতে চায় খেলার 
সর্বশেষ খবর এবং দেখে নিতে চায় 
পদতালিকার সর্বশেষ অবস্থান!
-
আমি যার দিকে তাকিয়ে আছি, আমার 
জাতি যার দিকে তাকিয়ে আছে তাদের 
দিনরাতের ভাবনা এখন ফিলিস্তীন, বা 
ইরাক-আফগানিস্তান নয়! কোথায় হিংস্র 
হায়েনাদের থাবায় মুসলিম উম্মাহর কত রক্ত 
ঝরছে তাদের চিন্তা সে সম্পর্কে নয়।
-
তাদের কৌতুহল শুধু কোন খেলোয়াড়ের 
কত ঘাম ঝরছে স্বর্ণপদকের জন্য! হায়, কারা
 হতে পারতো ‘স্বর্ণজয়ী’, অথচ ছুটছে 
স্বর্ণজয়ের পিছনে! আর কারা সন্তুষ্ট শুধু 
স্বর্ণজয়ের খবর শুনে!
-
গোটা দেশ যখন মেতে ওঠে শুধু খেলার ধূলো 
গায়ে মাখার জন্য, তখন সে দেশের ভবিষ্যত কী
 হতে পারে?
-
এমন যে বাংলাদেশ, খেলার মাঠেও যার কোনো 
প্রাপ্তি নেই একরাশ লজ্জা ছাড়া; ক্ষুধা ও 
দারিদ্র্যের সঙ্গে যার নিত্য বাস, যে দেশের সত্যি 
সত্যি ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’, খেলাধূলার নামে
সে দেশেরও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঢালা হয়
কোটি কোটি টাকা, অথচ বিভিন্ন সেবাকর্ম এবং বহু গবেষণা-প্রকল্প থেমে থাকে প্রয়োজনীয় 
টাকার অভাবে!
সেই দেশ, সেই জাতি কীভাবে স্বপ্ন দেখতে 
পারে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের?
-
সারা পৃথিবী এখন শুধু মেতে আছে নয়, বরং 
মত্ত ও উন্মত্ত হয়ে আছে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে।
 যেনো পৃথিবীতে এখন ক্ষুধা নেই, দারিদ্র্য নেই, 
রোগ-ব্যাধি নেই, শিক্ষার সমস্যা নেই এবং 
সম্পদের অভাব নেই। তাই তো নির্মম রসিকতা 
করে। সম্প্রতি কেউ বলেছেন, ‘মানবজাতির 
এখন কোনো সমস্যা নেই, তিনশ টুকরো স্বর্ণ ছাড়া।’
-
এই বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক দেশের খরচ 
হচ্ছে হাজার হাজার কোটি ডলার। খেলা 
চলাকালে দৈনিক খরচ কয়েক শত কোটি
 ডলার। এছাড়া রয়েছে অংশগ্রহণকারী 
দেশগুলোর বিপুল ব্যয়।
-
অথচ পৃথিবীর দেশে দেশে কোটি কোটি বনি 
আদম চরম দারিদ্র্যের শিকার। তারা যাপন 
করছে মানেবেতর জীবন। অন্ন, বস্ত্র, 
বাসস্থান, চিকিত্সা ও শিক্ষা- এসব মৌলিক 
মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত পৃথিবীর 
অন্তত একশ কোটি মানুষ। 
-
এই বিপুল অর্থ, মেধা ও শ্রম যদি ব্যয় হতো
 পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করার কাজে 
এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, 
তাহলে মানবতার জন্য কতো কল্যাণকর হতো!
-
আমরা হয়ত পারবো না বিশ্বকে সংশোধন 
করতে, এমনকি আপন দেশ ও জাতিকে 
সাবধান করতে, কিন্তু আমি কি পারি না 
অন্তত নিজেকে রক্ষা করতে অর্থের, চিন্তার
 এবং সময়ের অপচয় থেকে!
-
নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলাধূলার 
অবশ্যই প্রয়োজন আছে, তবে খেলার ধুলা থেকে
 তো নিজেকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে, যদি
 সত্যি আমি পেতে চাই আলোর ভুবন এবং
 আলোকিত জীবন ।
-
হে কিশোর! হে তরুণ! আগামীকাল’ বলো 
না, ‘গতকাল’ আমাকে সতর্ক করা হয়নি।

টাইমলাইন থেকে নেয়া
এসএস
AddThis Sharing Buttons
Share to PrintShare to FlipboardShare to More1.1K

Sunday, June 3, 2018

কোরআনের আলোকে বৈবাহিক জীবন


আর তাঁর আশ্চর্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের মধ্যে শান্তি পাও আর তিনি তোমাদের মধ্যে দিয়েছেন প্রেম আর মায়া যারা চিন্তা করে তাদের জন্য নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে(সূরা রুম:২১) 
একটা সুন্দর সংসার এর জন্য স্বামী-স্ত্রীর কি  করা উচিত, কি না করা উচিত এগুলো নিয়ে আমরা তো কত লেখাই পড়ি, কত মানুষের কত উপদেশই শুনি – তার কতটা সত্য কতটা মিথ্যা কে জানে? কিন্তু, একটি সুখী বিবাহিত জীবন পাওয়ার জন্য কি করতে হবে – সেই শর্তগুলি যদি সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে আসলে তাহলে কেমন নয়? যিনি স্রষ্টা তার চাইতে বেশী কে জানবে তার সৃষ্টি সম্পর্কে? ভেবে দেখুন, যেখানে মহান আল্লাহ্‌ আমাদের সরাসরি বলে দিচ্ছেন – এই যে মানুষ! শোনো! তুমি যদি সুখী সংসার চাও তোমাকে এই এই কাজগুলো করতে হবে – তাহলে আমাদের কি আর অন্য কোনো দিকে তাকানো ঠিক হবে?
একটা আনন্দময় সংসারের জন্য স্বামী/স্ত্রীর পারষ্পরিক করণীয় কি হবে – এই লেখায় তা আমরা কুরআন মাজিদের সূরা নিসা’র ৩৪ নং আয়াতের প্রথম অংশের আলোকে আলোচনা করব। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে প্রথমে ছেলেদের কি করণীয় তা বলেছেন, এরপর মেয়েদের কি করণীয় তা নিয়ে বলেছেন। আমি আয়াতটির বাংলা অনুবাদে ইচ্ছে করে গুরুত্বপূর্ন শব্দগুলোকে আরবীতে রাখব। তারপর সেই আরবী শব্দগুলোর অর্থ ধরে ধরে স্বামী/স্ত্রীর পারষ্পরিক করণীয় কাজগুলির তালিকা বের করব। আসুন তাহলে শুরু করা যাক —

মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

 4-34
অর্থ:
ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে “ক্বাওয়াম” হবে; কারণ, আল্লাহ্‌ তাদের কাউকে কারো উপর সুবিধা দিয়েছেন, এবং কারণ তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করবে
কাজেই, “সালিহা” মেয়েরা হবে “কানিতা” ও “হাফিযা” – হেফাযত করবে যা দেখা যায় না এবং যা আল্লাহ্‌ তাদেরকে হেফাযত করতে বলেছেন     

আয়াতাংশটা যে জটিল সন্দেহ নেই। লক্ষ্য করলে দেখবেন, এখানে আসলে দুইটা বাক্য আছে (উল্লেখ্য, বাক্য আর আয়াত এক জিনিস নয়। অনেক বাক্য মিলে এক আয়াত হতে পারে, আবার একাধিক আয়াত মিলেও একটা বাক্য হতে পারে)। প্রথম বাক্যে আল্লাহ্‌ ছেলেদের করণীয়গুলি নিয়ে বলেছেন, আর দ্বিতীয় বাক্যে বলেছেন মেয়েদের করণীয়গুলি নিয়ে।
ছেলেদের করণীয় কাজগুলি দিয়ে শুরু করা যাক।

ছেলেদের করণীয়:

ছেলেদের করণীয় বুঝতে হলে আমাদেরকে “কাওয়াম” শব্দের অর্থ বুঝতে হবে। আরবী ভাষায় একটা ক্রিয়া (verb) কে বুঝা যায় তার বিপরীত ক্রিয়ার সাথে তুলনা করে। কাওয়াম বা উঠে দাঁড়ানো হলো বসে থাকার উল্টো। কাওয়াম বুঝায় সক্রিয়তা, যা নিষ্ক্রিয়তার উল্টো।

ছেলেদের করণীয় ১# সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে উদ্যোগী (active) হবে

আল্লাহ্‌ যখন বলছে ছেলেদের “কাওয়াম” হতে হবে, তখন তিনি বলছেন সম্পর্ক রক্ষায় ছেলেদের এক্টিভ হতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে, শুরু করতে হবে। একটা ছেলে যখন তার স্ত্রীকে দেখবে সে রান্নাঘরের কাজ নিয়ে, বাচ্চা নিয়ে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে – তখন নিজের উদ্যোগে এগিয়ে যেয়ে সাহায্য করতে হবে। ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যেতে মন চায় – সেটা ছেলেকেই আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী কি করছে তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেকেই আগে শুভেচ্ছা জানাতে হবে।
ভুল বুঝা-বুঝি, ঝগড়া হলে ছেলের যতই ইচ্ছে করুক ম্যান-কেইভ (পুরুষ-গুহা) এ যেয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে, যতই মনে আসুক ‘ও ভুল করেছে ওকে ক্ষমা চাইতে হবে’, নিজের মনের এই সব ইচ্ছাকে জলাঞ্জলী দিয়ে উদ্যোগী হতে হবে, ঝগড়াঝাটির জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, এগিয়ে যেয়ে ক্ষমা চাইতে হবে, মন থেকে ক্ষমা করে দিতে হবে। মেয়েরা সৃষ্টিগত ভাবে লাজুক প্রকৃতির, তাই এমনকি অন্তরঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রেও ছেলেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

ছেলেদের করণীয় ২# সম্পর্ক নবায়নে ক্রমাগত চেষ্টা চালাবে/ Showing continuous commitment

কাওয়াম শব্দের আরেক অর্থ হলো – কোন কিছু দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা, কিছুতেই ছেড়ে না দেয়া। আরবী ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য হলো কোন শব্দের মধ্যে যদি কোন অক্ষর পরপর দুইবার আসে তাহলে তা পুনরাবৃত্তি ও আধিক্য বুঝায়। যেহেতু কাওয়াম শব্দের মাঝখানে ‘ওয়াও’ অক্ষরটি দুইবার আছে, তাই এখানে কাওয়াম শব্দের মাধ্যমে বলা হচ্ছে – ছেলেদের বার বার চিন্তা করে দেখতে হবে, প্ল্যান করতে হবে, কি করলে আমাদের সম্পর্কটা দিনে দিনে আরো চুম্বকীয় হবে।
‘আরে ও তো আমারই, ও কি আর আমাকে ছেড়ে যাবে’ – এই জাতীয় চিন্তা বাদ দিতে হবে। কাজের মধ্যে থাকুন, অফিসে থাকুন আর যেখানেই থাকুন, মাঝে-মধ্যে ফোন করে খবর নিতে হবে। শত ব্যস্ততার ভিড়েও প্রায়োরিরিটি দিয়ে স্ত্রীর জন্য সময় বের করতে হবে। স্ত্রী সুন্দর করে সাজলে তার প্রশংসা করতে হবে। কারণ ছাড়াই মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে স্পর্শ করতে হবে, জড়িয়ে ধরতে হবে। আয়েশা(রা) এর হাদিস থেকে আমরা জানি রাসূলুল্লাহ(সা) বাসা থেকে বের হওয়ার সময় প্রায়ই তাঁকে চুমু দিয়ে বের হতেন।

ছেলেদের করণীয় ৩# ছেলেরা মেয়েদের শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রতিরক্ষা (to protect her) করবে

কাওয়াম শব্দের তৃতীয় অর্থ হলো – physically কোন কিছুর সাথে থাকা ও তাকে protect করা। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ বলছেন ছেলেরা মেয়েদের কাছাকাছি থেকে তাদেরকে নিরাপত্তা দিবে, কখনো একাকিত্ব বোধ করতে দিবে না। এই প্রোটেকশন কিন্তু শুধু শারিরীক নয়, মানসিকও। মেয়েরা ছেলেদের চাইতে বেশী আবেগপ্রবণ হওয়ায় লোকে কি বললো তা নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করে, কেউ বাজে ভাবে কথা বললে অনেক বেশী ভেঙ্গে পড়ে। কোনো মেয়ে যখন তার মানসিক অশান্তি নিয়ে কথা বলবে – একজন ছেলে সেটাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না, কটাক্ষ করবে না, উপদেশ না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুধু শুনবে। ছেলেরা মেয়েদের প্রোটেকশন দিবে – শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে।

ছেলেদের করণীয় ৪# ছেলেরা মেয়েদের প্রয়োজন (to fulfill her needs) পূরণ করবে

কাওয়াম শব্দের চতুর্থ অর্থ হলো – যত্ন নেয়া, পরিচর্যা করা, Take-care করা, চাহিদা পূরণ করা। মহান আল্লাহর একটা নাম হলো – আল-কাইয়ূম যা একই শব্দমূল “কা-মা” থেকে এসেছে। কাইয়ূম শব্দের অর্থ হলো – যে শুধু সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেয়নি, সবসময় তার যত্ন নিচ্ছে, দেখ-ভাল করছে। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে কাওয়াম শব্দের মাধ্যমে আমাদের বলছেন – ছেলেরা মেয়েদের যত্ন নিবে, দেখ-ভাল করবে, তাদের কি প্রয়োজন তা জিজ্ঞেস করবে, জানতে চাইবে।

ছেলেদের করণীয় ৫# ছেলেরা মেয়েদের সাথে ন্যায্য (fair) আচরণ করবে

কাওয়াম শব্দের পঞ্চম অর্থ হলো –  কাউকে বা কোন কিছুকে তার ন্যায্য পাওনা দেয়া। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি – “আল্লাহ্‌ নামাজ কায়েম করতে বলেছেন”। আমরা কিন্তু বলি না আল্লাহ্‌ নামাজ পড়তে বলেছেন। কারণ “কায়েম” শব্দটা আরো উঁচু স্তরের শব্দ – যার অর্থ যতটুকু মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে নামাজ পড়া দরকার ঠিক সেভাবে নামাজ পড়া। অন্যভাবে বলতে গেলে – আমাদের উপর নামাজের যে দাবী তা ন্যায্যভাবে আদায় করা।
একইভাবে –ছেলেদেরকে মেয়েদের ব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে তার ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। আল্লাহ্‌ একজন ছেলেকে তার পরিবারের মেয়েদের উপর জিম্মাদার করে পাঠিয়েছেন। তাই একজন ছেলে নিজেকে সবসময় জিজ্ঞেস করবে – আমি কি ওর সাথে ন্যায্য আচরণ করছি? আমার শক্তি বেশী, গলার জোর বেশী, মনের দৃঢ়তা বেশী – এগুলো ব্যবহার করে আমি ওর উপর কোন জুলুম করছি না তো?
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন – তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর/পরিবারের প্রতি শ্রেষ্ঠ (মুসলিম)। 

ছেলেদের করণীয় ৬# ছেলেরা মেয়েদের খরচ চালাবে

“ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে “ক্বাওয়াম” হবে; কারণ, আল্লাহ্‌ তাদের কাউকে কারো উপর সুবিধা দিয়েছেন, এবং কারণ তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করবে”। (সূরা নিসা ৪:৩৪ আয়াতাংশ)
নারীর জন্য খরচ করার ব্যাপারে কিপটামি করা যাবে না। ইসলামে এমনকি ডিভোর্স দেয়ার সময়েও গিফট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই, স্ত্রী থাকাকালীন সময় যে গিফট দিতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন – কেউ তার পরিবারের জন্য যা ব্যয় করে তা সাদাকাহ বলে গণ্য হয়।
উপরের কথাগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারছি আল্লাহ্‌ ছেলেদেরকে মেয়েদের ব্যাপারে অনেক দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। আর লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো – আল্লাহ্‌ কিন্তু বলেননি “স্বামীরা স্ত্রীর ব্যাপারে কাওয়াম হবে”, বরং বলেছেন “ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে কাওয়াম হবে”। অর্থাৎ, একজন ছেলেকে শুধু তার স্ত্রীর সাথেই নয়, শরীয়ত তাকে যে সব নারীদের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের সবার সাথেই তাকে কাওয়াম হতে হবে। একজন ছেলেকে তার মা, বোন, মেয়ে, খালা, ফুপু সহ সবার ব্যাপারে কাওয়াম হতে হবে। তাদের সবার সাথে সম্পর্ক রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে, যোগাযোগ রাখতে হবে, মানসিক-শারিরীক প্রতিরক্ষা দিতে হবে, কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে হবে, তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
দায়িত্বের এই লিস্ট পাওয়ার পর কোন ছেলে চার বিয়ে করা তো দূরে থাক, প্রথম বিয়ে করার আগেই একশ’ বার চিন্তা করবে – ওরে বাবা! এত দায়িত্ব আমি পালন করতে পারবো তো? কেন যে পুরুষ হয়ে জন্মেছিলাম!
অধৈর্য হবেন না। এবার আসতে যাচ্ছে মেয়েদের দায়িত্বের তালিকা …

মেয়েদের করণীয়:

সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে ছেলেদের করণীয় কাজগুলি বর্ণনা করার পর আল্লাহ্‌ মেয়েদের সম্পর্কে বলছেন –
কাজেই, “সালিহা” মেয়েরা হবে “কানিতা” ও “হাফিযা” – হেফাযত করবে যা দেখা যায় না এবং যা আল্লাহ্‌ তাদেরকে হেফাযত করতে বলেছেন     
আল্লাহ্‌ বাক্যটি শুরু করলেন ‘ফা’ বা ‘কাজেই/সুতরাং’ দিয়ে। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ বললেন যেহেতু ছেলেদেরকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, মেয়েদেরকেও স্বাভাবিকভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এরপর লক্ষ্য করুন বাক্যটির ব্যতক্রমী গঠন। আল্লাহ্‌ কিন্তু বলেননি – “মেয়েরা হবে সালিহা, কানিতা, হাফিযা …”। বরং তিনি বলেছেন – “সালিহা মেয়েরা হবে কানিতা ও হাফিযা – …”। তার মানে আল্লাহ্‌ বলছেন না যে সব মেয়েরা কানিতা, হাফিযা হতে পারবে। বরং, মেয়েদের প্রবণতা হলো কানিতা ও হাফিযা না হওয়া। শুধু সেই সব মেয়েই এই গুণ অর্জন করতে পারবে যারা সালিহা। অর্থাৎ, অন্য সব গুণ অর্জনের পূর্বশর্ত হলো “সালিহা” হওয়া। আসুন তাহলে “সালিহা” শব্দের অর্থ সম্পর্কে জানা যাক।
“সালিহা” এসেছে “সালাহা” থেকে যার অর্থ একটি অর্থ হলো “ভালো”। কোন কিছু নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সেটাকে ঠিক করে ফেলাকে আরবীতে বলে “সালাহা”। স্কলারেরা বলেন, এখানে আল্লাহ্‌ মেয়েদের ব্যাপারে “সালাহা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন কারণ মেয়েদের মধ্যে আল্লাহ্‌ এমন বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়েছেন যে তারা চাইলে যে কোনো কিছুরই খুঁত ধরতে পারে। একজন মেয়ের স্বামী যতই তার সাথে ভালো করুক না কেন, সে চাইলেই তার দোষ ধরতে পারবে – এই গুণ তার আছে। কিন্তু, আল্লাহ্‌ সবচেয়ে প্রথমে এই কাজটিই করতে নিষেধ করছেন।

মেয়েদের করণীয় ১# স্বামীর দোষ উপেক্ষা করবে

আল্লাহ্‌ বলছেন একজন স্ত্রীর সবচাইতে বড় গুণ হলো স্বামীর দোষ এড়িয়ে যাওয়া, দেখেও না দেখার ভান করা, ভুলে যাওয়া। প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে তার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করা।  রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে –  কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনও দোষ  দেখে বিরক্ত বোধ করে, তখন সে তার এমন গুণের কথা স্মরণ করুক যার জন্য সে তাকে ভালবাসে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন – কোন মেয়ে যখন তার স্বামীর দোষ ধরে তখন স্বামীটি এটাকে তার Manliness এ আঘাত বলে মনে করে। ফলে, আরো বেশী চটে উঠে। স্বামীর  কোন দোষ চোখে পড়লে যথাসম্ভব চেষ্টা করুন তা না দেখার ভান করতে, আর একদমই সহ্য না করতে পারলে তাকে কটাক্ষ না করে বুঝিয়ে বলুন, অনুরোধ করুন। এ বিষয়ে SheKnows Blog[৪]  এর এই লেখাটি পড়তে পারেন।

মেয়েদের করণীয় ২# সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করবে

মানুষের দোষ উপেক্ষা করা সহজ না, খুব কঠিন একটা কাজ, আর স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য করা তো আরো কঠিন। আর তাই মহান আল্লাহ্‌ মনে করিয়ে দিলেন – না, না। তুমি দোষ উপেক্ষা করে ভালো আচরণ করবে, কারণ তুমি “কানিতা”। “কানিতা” শব্দের অর্থ হচ্ছে “যে খুশী মনে নিজের ইচ্ছার পরিবর্তে অন্যের ইচ্ছাকে মেনে দেয়”। কিন্তু, “কুনুত” শব্দটি ইসলামে ব্যবহৃত হয় নিজের ইচ্ছার উপর আল্লাহর ইচ্ছাকে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ – এখানে আল্লাহ্‌ বলছেন – মেয়েরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে স্বামীর সাথে ভালো আচরণ করবে, তার কথা শুনবে। স্বামীর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক কতটা ভালো না মন্দ – তা দেখে বুঝা যায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক কতটা ভালো না মন্দ। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন – আমি যদি তোমাদেরকে আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীদেরকে হুকুম করতাম স্বামীকে সিজদা করার জন্য (ইবনে মাজাহ)।

মেয়েদের করণীয় ৩# স্বামীর অবর্তমানে তার দোষের কথা বলবে না

এরপর আল্লাহ্‌ মেয়েদেরকে বলেছেন “হাফিযা” বা প্রতিনিয়ত রক্ষা করতে – আল্লাহ্‌ তাদের রক্ষা করতে বলেছেন “যা দেখা যায় না”। এর প্রথম অর্থ হলো – স্বামীর অবর্তমানে মেয়েরা তার সম্মান রক্ষা করবে, তার দোষের কথা মানুষকে বলবে না, তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করবে না। স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে একে অপরের অংশ। একজন স্বামী/স্ত্রী যখন নিজের তার সঙ্গীর অবর্তমানে দোষের কথা বলে, তখন সে তার নিজের একটা অংশেরই অপমান করে।

মেয়েদের করণীয় ৪#  বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না

“হাফিযা” হওয়ার দ্বিতীর অর্থ হলো –  স্বামী যখন তাদের দেখছে না তখনও মেয়েরা তার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না। অন্য পুরুষেরা হয়তো মেয়েটার সাথে বেশী বেশী কথা বলতে চাইবে, কাছে আসতে চাইবে, চান্স নিতে চাইবে। কিন্তু, মেয়েরা স্বামীর অবর্তমানে এমন কিছু করবে না, যা তার স্বামী সামনে থাকলে সে করতো না। স্বামী যেখানে যেতে নিষেধ করবে সেখানে যাবে না, যার সাথে কথা বলতে নিষেধ করতে তার সাথে কথা বলবে না, যে কাপড় পড়তে মানা করেছে তার পড়বে না। “হাফিয” হচ্ছে আল্লাহর একটি নাম। এর থেকেই বুঝা যায় মেয়েদের প্রতি অর্পিত এই দায়িত্ব কতটা পবিত্র।

মেয়েদের করণীয় ৫# স্বামীর আকাঙ্ক্ষা পূরনে নিজেকে প্রস্তুত (beautify herself) করবে

“হাফিযা” হওয়ার তৃতীয় অর্থ হলো মেয়েরা তার স্বামীর আকাংক্ষাকে রক্ষা (to protect his desire) করবে। স্ত্রীর অবর্তমানে স্বামী কোথায় যাচ্ছে সে কিন্তু জানে না। স্ত্রীর দায়িত্ব হল – যাদেরকে সে দেখতে পাচ্ছে না তাদের থেকেও স্বামীকে রক্ষা করা।  রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন – শয়তান পরনারীকে ছেলেদের চোখে সুন্দর করে দেখায়। কাজেই, একজন মেয়ের দায়িত্ব হলো তার স্বামী যাতে শয়তানের সাথে লড়াইয়ে বিজয়ী হয় তাতে সাহায্য করা। স্বামী যখনই তার স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইবে – অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী তাকে না করবে না, কারণ এতে একজন স্বামী খুব কষ্ট পায়, তার মন ভেঙ্গে যায়। আর এই সুযোগে শয়তান এসে মনের মধ্যে ফিস ফিস করতে থাকে – আমি বলেছিলাম না সে তোমাকে ভালবাসে না!
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন – ছেলেরা সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ বোধ করে চোখের দেখায় [৬]।  স্বামী ঘরের ফেরার আগে মাত্র ৫ মিনিট ব্যয় করেই কিন্তু একটা মেয়ে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করতে পারে। মেয়েদের সহজাত প্রবণতা হলো – স্বামী ছাড়া পৃথিবীর সবার জন্য সে সাজবে। অথচ, একটা মেয়েকে সুন্দর দেখার সবচেয়ে বেশী অধিকার হলো তার স্বামীর। এখানে বলা হচ্ছে না যে সব মেয়েদের সুপারমডেল হয়ে যেতে হবে। স্বামীরা জানে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে একটা মেয়েকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। এখানে খুব সাধারণ সাজগোজের কথা বলা হচ্ছে যা ৫/১০ মিনিটেই করা যায়।
সাহাবাদের স্ত্রীরা স্বামীর ঘরের ফেরার সংবাদ পেলে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করে রাখতেন। স্বামীর সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করাও একটা ইবাদত। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ(সা) এমনকি মদীনায় দূত পর্যন্ত পাঠাতেন – অনেক সময় নির্দেশ দিতেন যাতে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের স্বাগত জানানোর জন্য সেজেগুজে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এতে সবচেয়ে বেশী লাভ কার? সবচেয়ে বেশী লাভ মেয়েদেরই। কারণ, যখন স্বামী বুঝতে পারবে তার স্ত্রী তাকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে, তখন সে তার প্রতি আরো বেশী ভালাবাসা ও আকর্ষণ বোধ করবে। আর যখন স্বামী দেখবে স্ত্রী তার জন্য নিজেকে সুন্দর করে রাখে না – সেই স্ত্রী ক্রমেই তার স্বামীর ভালোবাসা হারাবে।
শেষ কথা
রাসূলুল্লাহ   বলেন – “আমি যদি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম, আমি স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য” 
(ইবনে মাযাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা থেকে বর্ণিত)

এই হাদিসের ব্যাখায় স্কলারেরা বলেন – একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালবাসবে, সম্মান করবে ও তার মতামত অনুসারে কাজ করবে (হারাম কাজ ছাড়া) এবং তার সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করবে। তবে, স্বামীকে সম্মান করার অর্থ এই নয় যে স্বামী অন্যায়-অত্যাচার করলেও তাকে মুখ বুঁজে মেনে নিতে হবে। সম্মান করার অর্থ এটাও নয় যে স্ত্রী স্বামীর সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। বরং, স্ত্রী স্বামীর সাথে ভিন্নমত পোষন করতে পারবে, পরামর্শ দিবে, প্রয়োজনে যুক্তি সহকারে নিজের মতকে তুলে ধরবে – কিন্তু এই সবই সে করবে সম্মানের সাথে, কটাক্ষের ছলে নয়। রাসূলুল্লাহ(সা) এর সাথে তাঁর স্ত্রীরা অনেক সময় ভিন্নমত পোষন করেছেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় স্ত্রীর পরামর্শেই রাসূলুল্লাহ(সা) সর্বপ্রথম তাঁর মাথার চুল চেঁছে ফেলেছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, যদি এমন হয় যে – একজন মেয়ের স্বামী তাকে কিছু করতে বলে, আর মেয়েটির পিতা-মাতা ও ভাই-বোন তাকে অন্য কোন কিছু করতে বলে,  এক্ষেত্রেও মেয়েটিকে তার স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে [৫]। এ বিষয়ে পাশ্চাত্যের বহু রিলেশনশিপ এক্সপার্টও এখন বলেন – “দ্য হ্যাপিয়েস্ট ওয়াইফ ইয দা সারেন্ডারড ওয়াইফ” (এ বিষয়ে লরা ডয়েল এর বেস্ট-সেলিং বই “দা সারেন্ডারড ওয়াইফ” [৭] পড়ে দেখতে পারেন)।
কোনো কিছুই এমনি এমনি হয় না। যে কোনো কিছু পাওয়ার জন্যই চেষ্টা করতে হয়। একটা সুন্দর সুখী সংসার গড়ার জন্যও চেষ্টা করতে হয়। একটি সুন্দর-সুখী পরিবার গড়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী দুইজনকেই চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে ভুল হবে, মান-অভিমান হবে, কিন্তু সেটাকে ধরে রাখলে চলবে না। একে অপরের ভুলকে উপেক্ষা করে সুন্দর সংসারের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
[এই লেখাটি স্বামী-স্ত্রীর পারষ্পরিক দায়িত্বের কোন  পরিপূর্ণ/কম্প্রিহেনসিভ লিষ্ট নয়। ছেলে-মেয়ের সুন্দর, ভালাবাসাময়, শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যে প্র্যাক্টিকাল স্টেপ গুলো নিতে হবে শুধু সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়। এগুলোর বাইরেও স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি অনেক ধর্মীয় দায়িত্ব (যেমন – পরষ্পরকে ইসলাম পালন করতে সাহায্য করা, উৎসাহ দেয়া, ইসলাম শিক্ষা করা ইত্যাদি) আছে। ]

কমিশনার একরামের আদরের দুই মেয়ের আবেগময় স্ট্যাটাস


প্রিয় বাবা💜🌹
কেমন আছো তুমি! নিশ্চয় অনেক ভালো আছো। আমরা কিন্তু ভালো নেই। কারণ আমাদের পুরু পৃথিবীটা যে তোমাকে ঘিরেই ছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে তোমার কাজ ছিলো তোমার রাজকন্যাদের রেডি করা। বাইকে করে প্রাইভেট পড়তে নিয়ে যাওয়া। স্কুলে পৌঁছে দেয়া।
জানো বাবা বাড়িতে অনেক মানুষ চাচা-চাচী,জেঠু-জেঠিমা,ফুফি-ফুফা আর বাড়ি ভর্তি কাজিনরা। সবার মাঝে তোমার ছায়া খুঁজে চলছি আমরা দুই অনাথ রাজকন্যা। বার বার রাজকন্যা বলছি কারণ তোমার চোখে আমরা রাজকন্যাই ছিলাম।
হয়তো খুব বেশী প্রাচুর্যপূর্ণ ছিলোনা আমাদের জীবন,কিন্তু কখনো কোন কিছুর অভাব তুমি বুঝতে দাওনি আমাদের। আমাদের ছোট বড় সব চাওয়া তোমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে সবার আগে।
সবার মুখে শুনেছি তোমার জানাজাতে প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়েছিলো,ইসলাম ধর্মে মেয়েরা সেখানে যেতে পারেনা,তাই আমাদের দেখা হলো না স্বচক্ষে,তুমি কতটা জনপ্রিয় ছিলে সবার কাছে।
হয়তো ঈদের পর থেকে আমাদেরকে স্কুল বাস নিয়ে যাতায়াত করতে হবে। সে সময় তোমাকে অনেক মিস করবো। তোমার শরির থেকে বাবা-বাবা একটা ঘ্রাণ আসতো, খুব মিস করবো সে ঘ্রাণ।
তোমার গানের গলা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ছিলো,আমাদের আবদারে সব গান গেয়ে শুনাতে। মিস করবো সে দরাজ ভরা কণ্ঠের গান।
তোমার ভালো মানের চশমার প্রতি লোভ ছিলো,তোমার রেখে যাওয়া সে সব চশমা আমাদের দিকে জ্বলজ্বল করে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
এই কিশোর বয়সে হারিয়ে ফেলবো তা কল্পনাতীত ছিলো।কিন্তু আল্লাহ্‌ তোমাকে নিয়ে গেলেন,হয়তো উনি তোমাকে আমাদের চাইতে বেশী ভালোবাসেন।
বাবা তোমার অসমাপ্ত স্বপ্ন আমরা পুরা করবো,তোমার দেখিয়ে দেওয়া পথে আমরা আজীবন চলবো।
তোমাকে কথা দিলাম,আমরা তোমার সত্যিকার রাজকন্যা হয়ে তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। ওপরে অনেক ভালো থেকো বাবা। 💜
ইতি
তোমার রাজকন্যাদ্বয়
তাহিয়াদ/নাহিয়ান
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা

"এক জাতি, এক ভূমি"- এই চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একদা যে মুসলিম উম্মাহ্‌ পরিণত হয়েছিল বিশ্বের প্রভাবশালী সভ্যতায় সেই একই ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ