Wednesday, August 29, 2018

ইসলামের সু-দিন আসন্ন


by উবায়দুর রহমান খান নদভী

বিশ্ব মিডিয়ার দুষ্ট শক্তিটি কত যে নির্লজ্জ তা কল্পনাও করা যায় না। সংবাদ দেখা গেল, আইএস এর প্রধান বাগদাদী নাকি বার্তা দিয়েছেন ইসলামের শত্রুদের ওপর ছুরি চাকু লাঠি যা দিয়ে পার আঘাত কর। সংবাদে কয়েকটি মুসলিম ও আরব দেশের নাম উল্লেখ করে টার্গেটও বলে দেওয়া হয়েছে। পাঠকের হয়তো মনে আছে, বহুদিন আগে কমপক্ষে ১০০ মিডিয়া এমন সংবাদ প্রচার করেছে যে, আবু বকর আল বাগদাদী নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যু ধ্বংস ও পরাজয় নিয়ে আনন্দ উল্লাসও কম হয়নি। বড় বড় দেশ তাকে শেষ করার কৃতিত্ব নিয়ে কাড়াকাড়িও করেছে। বলেছে, আইএস পর্ব শেষ। খলীফা দাবীকারী বাগদাদীও শেষ। কিন্তু সাম্প্রতিক দেওয়া তার ‘গায়েবী’ বার্তায় বোঝা যাচ্ছে বিশ্ব ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির চক্রান্ত বাস্তবায়নে বাগদাদীর নামটি ব্যবহার করার প্রয়োজন তাদের ফুরিয়ে যায়নি। যেমন, আল কায়েদা, বিন লাদেন, আল আওলাকী ও আইমান আল জাওয়াহেরী এসব নাম পশ্চিমাদের বহু অপকর্মে ব্যবহৃত হয়েছে। তারা প্রকৃতই যে দর্শন নিয়ে নিজেদের সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন, সে বিষয়ে আলোচনা থাকতেই পারে। পশ্চিমাদের দ্বিমত ও বিদ্বেষ থাকাও স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের জড়িত না থাকা বহু ঘটনা পশ্চিমারা নিজেরা ঘটিয়ে তাদের নামে চালিয়ে দিয়েছে এমন ঘটনাও কম নয়। মজার ব্যাপার হলো, আইএস যত মানুষ মেরেছে এর ৯৯ ভাগ মুসলমান। অমুসলিম হত্যা বা ইসরাইলে হামলা আইএসের কার্যতালিকায় নেই। বাংলাদেশে একবার জোর চেষ্টা চলেছিল আইএস আছে তা প্রমাণ করার। সরকার সন্ত্রাসী আছে বলে তাদের দমনে সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও আইএস আছে এ কথা এক সেকেন্ডের জন্যও স্বীকার করেনি। কারণ, এতে বহু ঝামেলা আছে। আইএস থাকা মানে ব্যাপক মুসলমান হত্যা, জিহাদের নামে নানা অসভ্যতা আর ইসলামের বদনাম। আইএস কারা, চালায় কারা, এসবই প্রশ্ন হয়ে আছে। জিহাদকে ধ্বংস ও বদনাম করার জন্য তৈরি হয়েছে বহু নকল মুজাহিদ। আফগানিস্তানে প্রচুর হিন্দু মুজাহিদ রূপ নিয়ে তালেবানের হাতে ধৃত হয়েছে। পাকিস্তানে তালেবান সাজ ধরে বহু মুশরিক গোয়েন্দা ধরা পড়েছে। প্রায় ৪০ বছর আফগান প্রতিরোধ লড়াইয়ে প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন মিত্র শক্তি যখন পরাজয়ের দিন গুনছে তখনই সেখানে নকল মুক্তিযোদ্ধা, মুজাহিদ, তালেবান ও আইএস দেখা দিচ্ছে। আইএস নির্মূলের পর, বাগদাদীকে হত্যার পর আবার কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের মানুষের ওপর ছুরি চাকু নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার হুকুম এখন কোন বাগদাদী দিচ্ছেন, এটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
আসলে কোরআন সুন্নাহর অনুসারী প্রকৃত মুজাহিদদের, স্বদেশ স্বজাতির স্বাধীনতা ও সম্মান পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাপী ন্যায়ের যোদ্ধাদের ধ্বংস করতে দুষমনরাই ডামি মুজাহিদ তৈরি করে। এদের বিপক্ষে কেউ কথা বললে বলে এ লোক জিহাদকে অস্বীকার করছে। কিন্তু দুষমনরা জানে না, কেবল একজন ঈমানদার নয়, দুনিয়ায় কোনো নীতি নিষ্ঠ মানুষই জিহাদকে অস্বীকার করতে পারে না। তাহলে যুগে যুগে ন্যায়ের সংগ্রাম ও মুক্তির লড়াই চলত না। পশ্চিমারা জিহাদকে ভয় পায়। তাই জিহাদী পরিবেশে তারা দালাল ঢুকিয়ে এর যৌক্তিকতা ও পবিত্রতাকে নষ্ট করে। ইহুদী নাসারাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকে। তারা মুসলমানের সন্তানদের বাবা মা থেকে আলাদা করে, শরনার্থী বানায় এবং পরে ‘ছেলে ধরা’র মত নিয়ে যায়। অজ্ঞাত স্থানে তাদের লালন পালন করে, হিং¯্র বানায়। ধর্ম ও মনুষ্যত্ব দু’টোই কেড়ে নেয়। এরপর যেখানে প্রয়োজন মনে করে লেবাস পাগড়ী লাগিয়ে পাঠিয়ে দেয়। কাউকে মুজাহিদ বানায়, কাউকে আত্মঘাতী, কাউকে বিশাল ইসলামিক লিডার। আসলে এরা ভাগ্যাহত রোবট মাত্র। তাদের এ খেলা প্রায় ধরা পড়ে গেছে। আসল জিহাদ ও মুজাহিদ কেয়ামত পর্যন্তই থাকবে। আর দুষমনের ইদুর বেড়াল খেলার মুজাহিদ আসবে যাবে। সন্ত্রাসের ঢোলও বাজাতে বাজাতে ফেটে গেছে প্রায়। তারা ধরা খেয়ে গেছে মালয়েশিয়ায়। রাম ধরা খেয়েছে তুরস্কে। পাকিস্তানেও ধরা খাওয়ার পথে। মধ্যপ্রাচ্যের খেলায়ও আখেরে তারাই ধরা খাবে। কারণ, মুসলিম জনগণ সারা পৃথিবীতে একই পথের যাত্রী। তাদের আবেগ ও কর্ম এক কিবলার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। পরাশক্তির খেলার ছকে এলোমেলো ভাব। আসল গুটি চালা দু’জাহানের মালিকের পক্ষ থেকে হচ্ছে। আমি কাউকে সহজে মাথায়ও তুলি না, আর সামান্য কারণে মাটিতেও ছুড়ে ফেলি না। তবে আল্লাহর রহমত থেকে কখনোই নিরাশ হই না। তুরস্কে বড় ধরনের ধরা খেয়ে ইসলামের শত্রুরা নতুন অনেক চক্রান্ত করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা একের পর এক কৌশলও পাল্টাতে থাকবে। পরিণতি সেটাই হবে, যা আল্লাহ মালিক লিখে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে দুষমনের গোসসা অনেক বেড়ে গেছে। তুরস্ক ও পাকিস্তানে এমনকি গোটা আরব জাহানে পাগলা ঘোড়া দাবড়ে দেওয়ার পরেও তারাই ধরাশায়ী। শক্তি ও কৌশলে হেরে গিয়ে তারা এখন আমাদের লাউ গাছ ছিড়ে ফেলছে। গত কয়েকদিনের পশ্চিমা মনস্তত্ব থেকে যা স্পষ্ট। মসজিদে ঢিল মারা, আগুন দেওয়া, পর্দানশিন নারীদের ওপর আচমকা কিল-ঘুষি চালানো, সুন্নতি লেবাসওয়ালা লোকদের বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া, পরনারীর হাত ধরতে অস্বীকার করায় নাগরিকত্ব না দেওয়া ইত্যাদি এখন চলছে। সর্বশেষ আমেরিকায় একজন মুসলিম তরুণীকে চেকিংয়ের নামে এয়ারপোর্টের তিনস্তরের নিরাপত্তারক্ষীদের অমানবিক হয়রানি উল্লেখযোগ্য। সভ্যতার দাবীদার পরাশক্তি কতটুকু নৈতিক অধঃপতিত হলে একজন নারীকে সব যন্ত্রপাতির দ্বারা স্ক্যান করার পরেও তার অন্তর্বাস খুলে তার পিরিয়ডের রক্তমাখা প্যাড দেখার পর তারা নিরাপত্তাবোধ করেছে। নিরাপত্তাহীনতা এখন পশ্চিমাজগতে কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তা আন্দাজ করা কঠিন। এসবই নিজেদের কৃতকর্মের ফসল। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়ার মজলুম মানুষের আর্তনাদ কিভাবে রং নিবে তা বলা মুশকিল। তবে বিশ্ববাসী দেখার সুযোগ অবশ্যই পাবে ইনশাআল্লাহ। এই যে সূর্যতাপ, লেলিহান শিখার দাবানল, ঝড়-জলোচ্ছাস, ভূমিধস, বন্যা, সামগ্রিক অস্থিরতা এসবও খোদায়ী পাকড়াও এর সামান্য নিদর্শন মাত্র। অপরদিকে পশ্চিমা জগতে লাখো তরুণ তরুণীর মনের জগতে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা যে অকল্পনীয় নীরব বিপ্লব সাধিত হচ্ছে, তার কোনো জবাব নেই। গত কিছুদিনের মধ্যে জার্মানীতে ৩০ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। ফ্রান্সে ২০ হাজার। গত হজের প্রাক্কালে মার্কিন এক টিভি উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী ইসলাম গ্রহণ করে হজও পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার আবেগঘন বক্তৃতা বিশ্ব মানসকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ভারতে উগ্র এক নারী আরএসএস নেত্রী ইসলামের বিরুদ্ধে কটাক্ষমূলক বক্তৃতার পরপরই ¯œায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে এখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও মুসলিম জাতির কাছে দুঃখপ্রকাশ করে কাতর মিনতি করছেন। আর তার উগ্র ও ভুল তথ্যেপূর্ণ বক্তৃতার জবাব দিচ্ছেন অনেক শিক্ষিত হিন্দু নারী। এসবই সোশাল নেটওয়ার্কে একেরপর এক ভাইরাল হচ্ছে। যাদের কাছ থেকে আশা করা হয়নি এমন শত কণ্ঠে ইসলামের পক্ষে মুসলমানের পক্ষে সমর্থন আসছে। আসাম নিয়ে বাংলায় কথা হচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে সারা ভারতে কথা হচ্ছে। একবছরের মাথায় অসহায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে জাতিসংঘের প্রতিবেদন এসেছে। যাতে বর্মি সেনাপ্রধানসহ ছয় জেনারেলকে দায়ী করা হয়েছে। তাদের বিচারের সম্মুখীন করার প্রস্তাব এসেছে। ফেইসবুক তাদের আইডি বাতিল করেছে। অং সান সু চিকেও দায় মুক্তি দেওয়া হয়নি। বিশ্ব দরবারে চরম অপমান ছাড়াও সে সন্দেহভাজন। ধীর গতিতে হলেও পা পা করে এগুচ্ছে মজলুম মুসলমানের অধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশার যাত্রা। ফুরিয়ে যাচ্ছে আঁধার রাতের দীর্ঘ প্রহর। 

এমুহূর্তে শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক ইসলামী কর্ম তৎপরতা বিশ্বব্যাপী যে যেখানে করছেন। নানা নামে, নানা রূপে, নানা পদ্ধতিতে পরিচালিত সকল দীনি কাজকে সমান শ্রদ্ধা করে, পারস্পরিক ঐক্য ও মিল মহব্বত ধরে রেখে এ লম্বা সফরটি আমাদের শেষ করতে হবে। কিছুতেই শত্রুর ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। শয়তানী সন্ত্রাসে জড়ানো যাবে না। কুফুরী মতবাদে অংশ নিয়ে তাগুতি শক্তির হায়াত বৃদ্ধি করা যাবে না। অস্থায়ী দুনিয়ার সামান্য হালুয়া রুটির লোভে ঈমান ও আদর্শ বিসর্জন দেওয়া চলবে না। অর্থ বিত্ত ও ক্ষমতার উচ্ছিষ্টের লালসায় শত বছরের কণ্টকপূর্ণ হকের পথ চলা থেকে পা ফসকে বাতিলের ধ্বংস গহ্বরে পড়ে গেলে চলবে না। জান্নাতের রাস্তা থেকে অল্পের জন্য অধৈর্য হয়ে জাহান্নামের গর্তে ছিটকে পড়া চলবে না।

খেলাফত হারানোর শত বছরের কষ্ট মুছে দিতে আল্লাহর বেশি সময় লাগে না। কিন্তু তিনি সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবানের পাশাপাশি খুবই বড় প্রজ্ঞাবানও বটেন। অসময়ে তিনি কাউকে কিছু দেননা। ত্যাগ তিতিক্ষা ও শিক্ষাগ্রহণ শেষে মানুষ যখন যোগ্য ও প্রস্তুত হয়ে উঠে তখন তিনি তাদের জিম্মাদারী দান করেন। ভুলগুলো শোধরাতে হয়, গুনাহ থেকে তওবা করতে হয়, গাফলত ছেড়ে জাগতে হয়, বিচ্ছিন্নতা থেকে জুড়তে হয়। আল্লাহর কুদরত বড়ই বিচিত্র। তিনি ওহুদ থেকে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদকে বেছে নিয়েছেন আল্লাহর তলোয়ার হিসাবে। আগের জীবন পাল্টে গিয়ে মানুষ কত ডিগ্রি ঘুরতে পারে এর নজির দেখতে হবে ইসলামে। মদীনার শাহানশাহ যাকে সান্নিধ্য দিয়েছেন, সে হোক না পথের ধুলা। একটু পরেই দেখা গেল সেই হয়ে গেছে সাত আসমান ও জমিনের ঈর্ষনীয় বিশ্বনেতা। সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এছাড়া আর কি আছে। আমরা হতাশ নই। কবি ইকবালের ভাষায়, ‘হ্যায় ইয়াঁ ইয়ে হাকিকত কিসসায়ে তাতার সে/ পা-সবাঁ মিল গায়া কাবে কো সানাম খানে সে’। মানে, তাতারিদের ইসলাম গ্রহনের ঘটনা থেকে এ বাস্তবতাটিই প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে যে, দেবালয় থেকেও যুগে যুগে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে খানায়ে কাবার প্রহরীদের। ইতিহাস বারবার এমন দৃশ্য দেখেছে। ড. মাহাথির মোহাম্মদ, আনোয়ার ইব্রাহীম, রজব তাইয়েব এরদোগান, ইমরান খান ও তাদের শত সহ¯্র সহকর্মী এবং উম্মতে মোহাম্মদীর ঘোষিত ১৭০ কোটি আর অঘোষিত অগণিত আশাবাদী মানুষের কাকে আমি বাদ দেব। প্রত্যাশার, স্বপ্নের, সম্ভাবনার তালিকা থেকে কাকে ফেলে দেব ভেবে পাই না। কারণ, আল্লাহ বলেছেন, ‘লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ’। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হতাশা একধরনের কুফুরী।’ এত আশাবাদের মধ্যে নিরাশার ক্ষুদ্র কণাটিও যেন কোনো মুমিনের অন্তরে না থাকে। কেননা, ‘বিজয়ী তোমরাই হবে, যদি প্রকৃত ঈমানদার হয়ে থাকো।’ আল কোরআনের এ বানী দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই।

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা

"এক জাতি, এক ভূমি"- এই চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একদা যে মুসলিম উম্মাহ্‌ পরিণত হয়েছিল বিশ্বের প্রভাবশালী সভ্যতায় সেই একই ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ