Saturday, April 28, 2018

কেন আজ তাবলীগের বেহাল দশা; প্রফেসর মাওলানা আবদুর রাযযাক নাদভী দা:বা:


দেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন প্রফেসর  মাওলানা আবদুর রাজ্জাক নদভি চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, কাকরাইলে যা ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। একটি শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ দীনি প্লাটফর্ম এমন অবস্থার শিকার হবে তা ভাবাই যায় না। তাবলিগ জামাত সবার আস্থার প্রতীক  ছিলো। কিন্তু এখন আর সে আস্থা বাকি থাকবে বলে মনে হয় না।
সমস্যার বড় একটি কারণ হলো, মূল মানহাজ থেকে সরে আসা। মাওলানা সাদ কান্ধলভি এমন দৃষ্টিভঙ্গি লালান করেন যা তাবলিগের আকাবিরদের মানহাজের খেলাফ। তিনি বেশ কিছু বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। যা দীনের ইনহেরাফের নামান্তর। যে কোনো দল বা জামাত যখন গোড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, চলমান বিভক্তির কারণে তাবলিগ জামাতের যা ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় শক্তি ‍বিভক্ত হয়ে পড়লে তা শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে।


কাকরাইলে কেন এ সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না?
কাকরাইলে যারা জিম্মাদার তাদের অধিকাংশ জেনারেল শিক্ষিত। আলেমের সংখ্যা কম। আবার আলেমদের চেয়ে জেনারেলদের প্রভাব বেশি। তাবলিগের কাজ শুরু হয়েছে আলেমদের হাতে, প্রতিষ্ঠাও পেয়েছে আলেমদের হাতে। যখন তাবলিগের ‍জিম্মাদারি ননআলেমদের হাতে গেছে তখন থেকেই সমস্যার শুরু।
প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তাররা যদিও দীনের পথে এসে তাবলিগের মেহনতে যুক্ত  হয়ে দাওয়াতে কাজ করেন কিন্তু একজন আলেম যে গভীর থেকে দীন বুঝেন, দীনের দরদ বুঝেন সেভাবে জেনারেল সাথীরা সেভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।
এ জন্যই আলেম দরকার। আমি অবশ্যই তাদের সম্মন করি, স্বাগত জানাই। তারা আমাদের ভাই। আমার বলার উদ্দেশ্য হলো মূল ‍জিম্মাদারি ও তদারকি আলেমদের হাতে থাকা উচিত।
বর্তমনে যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে না, কোনো পক্ষই সমাধান বা ঐক্য চাচ্ছে৷
চলমান সমস্যা সমাধানে আপনার কী পরামর্শ?
আমি মনে করি উলামায়ে কেরামের জোরালো ভূমিকা ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না৷ তাই আওয়ার ইসলামের মাধ্যমে দীনের প্রতি দরদ ভালোবাসা রাখেন এমন সবার কাছে দরখাস্ত করতে চাই, দেশের শীর্ষ, বিজ্ঞ ও বিতর্কমুক্ত আলেমদের একটি কমিটি গঠন করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সামাধানে ভূমিকা রাখুন৷
আলেমদের যে কমিটি বিশ্ব ইজতেমার আগে গঠন করা হয়েছিলো যদি তাদের মাধ্যমেও সমাধান হয় তাহলে তাদের পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাবো৷
সাংবাদিক, প্রশাসন উলামায়ে কেরাম সবাইকে ভূমিকা রাখার আবেদন করবো৷ আমি একজন পুরাতন ও বহু দেশ সফরকারী সাথী হিসেবে সমস্যা সমাধানে যেকোনো খেদমত আঞ্জাম দিতে তৈরি আছি৷
আল্লাহ আমাদের মাঝে জোড় মিল মুহাব্বত বাড়িয়ে দিন, তাবলিগ জামাতকে সব ধরনের বিপদ থেকে হেফাজত করুন৷
আমিন।
AddThis Sharing Buttons

Friday, April 27, 2018

কাযা নামাজ আদায় করতেই হবে

অনেক আমল আছে, যা সময় পার হয়ে গেলে করতে হয় না বা করার সুযোগ থাকে না; কিন্তু নামাজ এমন একটি বিধান যা পালন করতেই হবে। সাম্প্রতিক আমাদের কিছু ভাই কাজা নামাজ নামে কিছু নেই বলে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাদের দাবি, নামাজ কাজা হয়ে গেলে তা পড়তে হয় না। তওবা করে নিলেই তা মাফ হয়ে যায়। হাক্কানি ওলামায়ে কেরাম কোরআন-হাদিসের আলোকে বিষয়টির বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

১) পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিঃসন্দেহে মোমিনদের প্রতি নামাজ অপরিহার্য রয়েছে, যার সময়সীমা নির্ধারিত।' এ আয়াতে নামাজের সময়সীমা নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা না হলে পরবর্তী সময়ে ওই নামাজ কাজা করার বিষয়টিও পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এটা আল্লাহ তায়ালার ঋণ, আর ঋণ সময়মতো আদায় না করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা আদায় করা জরুরি।

যেমন নিচের হাদিসে ওপরের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে-
২) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক মহিলা নবীজি (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আমার মা মান্নত করেছিলেন যে, তিনি হজ করবেন। কিন্তু তা আদায় করার আগেই তিনি মারা যান। এখন আমার করণীয় কী? নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন, তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ করে নাও। বলো তো, যদি তোমার মা কারও কাছে ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করতে? মহিলা বললেন, হ্যাঁ, তখন তার জবাবে নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন, তবে তোমরা আল্লাহর ঋণকেও পরিশোধ করো। কেননা, তিনি তাঁর প্রাপ্য পাওয়ার অধিক উপযুক্ত। (বোখারিঃ ১/২৪৯, নাসায়িঃ ২/২)

এ হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল, যে ইবাদত বান্দার ওপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য, তা বান্দার ওপর আল্লাহ তায়ালার পাওনা বা ঋণ। এ ঋণ থেকে দায়মুক্তির পথ হলো তা আদায় করা। যেমনিভাবে মানুষের পাওনা ঋণের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার দ্বারা মানুষের ঋণ থেকে দায়মুক্ত হওয়া যায় না, তেমনি নির্ধারিত সময় পার হওয়ার দ্বারা আল্লাহ তায়ালার ঋণ থেকেও দায়মুক্ত হওয়া যায় না। আর শরিয়তে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজের ব্যাপারে এ মূলনীতি যে পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে, জ্ঞানীমাত্রই তা বুঝতে সক্ষম।

অন্য একটি হাদিসে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক কাজা নামাজ আদায় করার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন-
৩) এক রাতে নবীজি (সাঃ) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে সফর করছিলেন। শেষ রাতে বিশ্রামের উদ্দেশে সফর বিরতি দিলেন। হজরত বেলাল (রাঃ) কে ফজরের নামাজের জন্য জাগিয়ে দেয়ার দায়িত্ব দিলেন। এরপর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এদিকে হজরত বেলাল (রাঃ) ও তন্দ্রাবিভূত হয়ে পড়লেন। ফলে সবার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেল। নবীজি (সাঃ) ঘুম থেকে জেগে সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পর সবাইকে নিয়ে ফজরের নামাজ কাজা করলেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ঘুম বা বিস্মৃতির কারণে যার নামাজ ছুটে গেল, যখন সে জাগ্রত হবে, তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। (বোখারিঃ ৫৯৭, মুসলিমঃ ৬৮১)

উপরের হাদিসে লক্ষণীয় বিষয় হলো, নবীজি (সাঃ) ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়া ফজর নামাজকে কাজা হিসেবে আদায় করে নিলেন এবং কাজা হয়ে যাওয়া নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি এ কথা বললেন না যে, নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেছে, তোমরা তওবা করে নাও। প্রমাণিত হলো, কাজা নামাজ আদায় করতে হবে। এ হাদিসের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, সেই দুই রাকাত যা নবীজি (সাঃ) কাজা হিসেবে আদায় করেছেন, আমার কাছে তা গোটা দুনিয়ার মালিকানা লাভ করার চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। (মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১৮১, মুসনাদে আবি ইয়ালাঃ ৩/২২-২৩, ২৩৭১)

নিচের হাদিসে বিষয়টি আরও স্পষ্টাকারে উল্লিখিত হয়েছে-
৪) খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফেরার দিন নবীজি (সাঃ) তাঁর সাহাবিদের বনু কোরায়জা অভিমুখে পাঠানোর সময় বললেন, তোমাদের কেউ যেন বনু কোরায়জায় না পৌঁছে আসরের নামাজ না পড়ে। সাহাবায়ে কেরাম রওনা হলেন। পথে আসরের নামাজের সময় অতিবাহিত হওয়ার উপক্রম হলে কিছু সাহাবি পথেই সময়ের ভেতর আসর পড়ে নেন। আর কিছু সাহাবি বনু কোরায়জায় পৌঁছার পর আসরের নামাজ কাজা পড়েন। নবীজি (সাঃ) এ ঘটনা শুনলেন। (বোখারিঃ ১/১২৯, ৪১১৯, মুসলিমঃ ২/৯৬)

কিন্তু পরে কাজা আদায়কারীদের এ কথা বলেননি যে, নামাজ শুধু নির্ধারিত সময়েই আদায়যোগ্য। সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এর কোনো কাজা নেই। সুতরাং এ হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল, কোনো কারণে নামাজ ওয়াক্তমতো না পড়তে পারলে সেই নামাজ অবশ্যই কাজা পড়তে হবে। এ কারণে যারা কাজা পড়েছিলেন নবীজি (সাঃ) তাদের সমর্থন করেছিলেন।

৫) স্বয়ং নবীজি (সাঃ) এর খন্দকের যুদ্ধের সময় কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছিল। তথা যুদ্ধের কারণে সময়মতো পড়া সম্ভব হয়নি। এসব নামাজ তিনি কাজা হিসেবে পড়ে নিয়েছিলেন। (বোখারিঃ ১/১৬২, ২/৩০৭)

নতুন করে ভাবার সুযোগ নেইঃ
এ প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো ইজমায়ে উম্মত। মুসলিম উম্মাহর সব মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত, ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা না হলে সময়ের পর তা কাজা করতে হবে। এ ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করা বা কোনো ওজরে কাজা হয়ে যাওয়া উভয় ধরনের বিধানই সমান। যেমন মালেকি মাজহাবের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম ইবনে আবদুল বার (রহঃ) বিনা ওজরে অনাদায়কৃত নামাজ কাজা করা অপরিহার্য হওয়ার সপক্ষে শরয়ি প্রমাণাদি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, 'ফরজ রোজার মতো ফরজ নামাজও সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাজা করতে হয়। এ ব্যাপারে যদিও উম্মতের ইজমাই যথেষ্ট দলিল। যার অনুসরণ করা ওইসব বিচ্ছিন্ন মতের প্রবক্তাদের জন্যও অপরিহার্য ছিল। তারপরও কিছু দলিল উল্লেখ করা হলো যথা-

নবীজি (সাঃ) এর বাণী। (আল ইসতিজকারঃ ১/৩০২-৩০৩)। এছাড়া হাদিসের প্রত্যেক কিতাবে 'বাবু কাজাইল ফাওয়ায়েত' তথা ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা করার অধ্যায় নামে কাজা নামাজ পড়ার পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। কাজা নামাজ আদায় করা জরুরি হওয়ার ব্যাপারে এটাও মজবুত প্রমাণ।

জেনে নিন কাজা নামাজ আদায় করার পদ্ধতিঃ
নামাজ একটি অবশ্য পালনীয় বিধান। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল বিবেকবান মুসলমান নর-নারীর ওপর প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেয়া কবিরা গুনাহ। পরে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। কেউ যদি তওবাও করে তাহলেও কাজা নামাজ আদায় করার হুকুম বিলুপ্ত হয় না, এমনকি হজ্জ্ব করার মাধ্যমেও মাফ হয় না। কেউ যদি কাজা নামাজ আদায় না করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এ রোগে মারা যায় আর অসুস্থাবস্থায় লোকটি ওয়ারিশদের তার পক্ষ থেকে কাজা নামাজের ফেদিয়া দেয়ার কথা বলে যায় এ অবস্থায় তার ওয়ারিশদের ওপর ফেদিয়া দেয়া ওয়াজিব। এমন অনেক লোক রয়েছে, যাদের জিম্মায় অনেক কাজা নামাজ রয়েছে।

কাজা নামাজ আদায় করার সময় এ নিয়ত করতে হবে, আমি অমুক দিনের জোহরের নামাজ কাজা আদায় করছি। যদি দিন-তারিখ মনে না থাকে, এমতাবস্থায় এভাবে নিয়ত করবে আমি আমার জীবনের সর্বপ্রথম জোহর নামাজের কাজা আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক কাজা নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নিয়ত করবে। এভাবে ততদিন পর্যন্ত কাজা নামাজ আদায় করতে থাকবে, যতক্ষণ না ব্যক্তির মন এ সাক্ষ্য দেবে, তার জিম্মায় কোনও নামাজ কাজা নেই। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল, প্রত্যেক নামাজের জামাতের কিছু সময় আগে মসজিদে চলে যাবেন, যেন একাধিক ওয়াক্তের কাজা আদায় করতে পারা যায়। যেমন কোনও ব্যক্তি আসর নামাজের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে গিয়ে আগের কাজা আসর নামাজ আদায় করল। এভাবে কাজা নামাজ আদায় করতে করতে একটা সময় আসবে যখন মনে হবে তার আর কোনও নামাজ কাজা নেই। যে ব্যক্তির জিম্মায় কাজা নামাজ রয়েছে, তার জন্য উত্তম হল নফল নামাজের পরিবর্তে কাজা নামাজ আদায় করা। কেন না সে কাজা নামাজ সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে।

তাহাজ্জুদ, এশরাক ও অন্যান্য নফল নামাজের সময় কাজা আদায় করবে। এজন্য যে, আশা করা যায় এ সময় কাজা আদায় করার মাধ্যমে তাহাজ্জুদ, এশরাক ও অন্যান্য নফল নামাজেরও সওয়াব পাওয়া যাবে। (ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়ার ১১তম খণ্ডের ৪৫৩নং পৃষ্ঠা)

শবেবরাত, শবেকদরেও কাজা আদায় করবে। উল্লেখ্য, কাজা নামাজ আদায় করার সময় শুধু ফরজ ওয়াজিব আদায় করবে। সুন্নত আদায় করতে হবে না। যেমন কোনও ব্যক্তির যদি এশার নামাজ কাজা হয়ে থাকে, এমতাবস্থায় সে শুধু চার রাকাত ফরজ এবং তিন রাকাত বেতের নামাজ আদায় করবে। তবে কারও যদি ফজর নামাজ কাজা হয়ে যায় এবং তা দ্বিপ্রহরের আগে আদায় করার ইচ্ছা করে, এমতাবস্থায় সুন্নতসহ ফরজ নামাজ আদায় করবে। আর কারও যদি জুমার নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে জুমার কাজা আদায় করবে না বরং চার রাকাত জোহর নামাজ আদায় করবে।

Thursday, April 26, 2018

কবি ফররুখ আহমদের কী অপরাধ?


১৯৭৩ সালের ১৬ জুন তৎকালীন গণমানুষের কণ্ঠস্বর "দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায়" আহমদ ছফার একটি নিবন্ধ কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। লেখাটির শিরোনাম ছিলো, ‘ কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ?’ লেখাটি তিনি শুরু করেছিলেন কবির জীবনের একটি দুঃসংবাদ দিয়ে। তিনি লিখেন,‘খবর পেয়েছি বিনা চিকিৎসায় কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে মারা গেছে। এই প্রতিভাধর কবি যাঁর দানে আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে পয়সার অভাবে তাঁর মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে পারেননি, ওষুধ কিনতে পারেননি। কবি এখন বেকার। তাঁর মৃত মেয়ের জামাই, যিনি এখন কবির সঙ্গে থাকছেন বলে খবর পেয়েছি তাঁরও চাকরি নেই।
মেয়ে তো মারাই গেছে। যারা বেঁচে আছেন, কি অভাবে, কোন অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিনগুলো অতিবাহিত করছেন, সে খবর আমরা কেউ রাখিনি। হয়ত একদিন সংবাদ পাব কবি মারা গেছেন, অথবা আত্মহত্যা করেছেন। খবরটা শোনার পর আমাদের কবিতাপ্রেমিক মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হবে? ফররুখ আহমদের মৃত্যু সংবাদে আমরা কি খুশি হব, নাকি ব্যথিত হব? হয়ত ব্যথিতই হব এ কারণে যে, আজকের সমগ্র বাংলা-সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজনও শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টাকে অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যত্ বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না, অথচ কবি ফ

ররুখ আহমদের মরার সমস্ত ব্যবস্থা আমরাই পাকাপোক্ত করে ফেলেছি। আমরা তাঁর চাকুরি কেড়ে নিয়েছি, তাঁর জামাই এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সত্ভাবে পরিশ্রম করে বাঁচবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। রাস্তা-ঘাটে কবির বেরোবার পথ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সবগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা ত্রুটি রাখিনি।
কবি ফররুখ আহমদকে আমরা এতসব লাঞ্ছনার মধ্যে ফেলেছি তার কারণ তো একমাত্র কবিতাই। ফররুখ আহমদের একমাত্র অপরাধ তিনি একদা পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতার একটি বিশেষ জীবনাদর্শ দুষ্টলোকের ভাষায় ইসলামি জীবনাদর্শ। এখন কথা হল, তখন কি পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লেখা অপরাধ ছিল? আমরা যতটুকু জানি পাকিস্তান এবং ইসলাম নিয়ে আজকের বাংলাদেশে লেখেননি এমন কোন কবি-সাহিত্যিক নেই বললেই চলে। অন্য অনেককে বাদ দিয়েও কবি সুফিয়া কামালের পাকিস্তান এবং জিন্নাহর ওপর নানা সমযে লেখা কবিতাগুলো জড়ো করে প্রকাশ করলে ‘সঞ্চয়িতা’র মত একখানা গ্রন্থ দাঁড়াবে বলেই আমাদের ধারণা। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস কবি সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হয়ে মস্কো-ভারত ইত্যাদি দেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন, আর ফররুখ আহমদ রুদ্ধদ্বার কক্ষে বসে অপমানের লাঞ্ছনায় মৃত্যুর দিন গুনছেন। ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করে বাংলাভাষার সতীত্ব হানি করেছেন। কিন্তু কবি ফররুখ আহমদ নিজে বলেছেন, তিনি শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, কবিতার ক্ষেত্রে তা নিশ্চয়ই দোষনীয় নয়। বিশেষত বাংলাদেশে এমন একটা সময় ছিল, কবি-সাহিত্যিকেরা উর্দু, ফারসি ঘেঁষা দেখাতে পারলে বর্তে যেতেন। তাদের অনেকেই এখন বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। তাছাড়া ইংরেজি, জার্মান, সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা নিয়ে যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কবিতা, গল্প লিখতে চেষ্টা করেছেন, তাঁদেরকে সে সকল রচনার জন্য পুরস্কৃত করতেও আমাদের বাধছে না। ও সমস্তের ফলে যে বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সে বিচার কে করবে? অথচ অন্য কবি-সাহিত্যিক সকলে বাইরে রয়েছেন। কিন্তু শাস্তি ভোগ করছেন একা ফররুখ আহমদ এ কেমন ধারা বিচার? ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে যে দু’টি উল্লেখযোগ্য নালিশ রয়েছে, সেগুলো হল তিনি রবীন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে চল্লিশজন স্বাক্ষরকারীর একজন। তিনি স্বশ্রদ্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু স্বাক্ষরদানকারী চল্লিশজনের অনেকেই তো এখনো বাংলাদেশ সরকারের বড় বড় পদগুলো অলংকৃত করে রয়েছেন। কিন্তু ফররুখ আহমদকে একা কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে? পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন না কে? আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিব) স্বয়ং তো এক সময়ে পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাতই মার্চের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাশাপাশি জয়-বাংলা এবং জয়-পাকিস্তান শব্দ দু’টো উচ্চারণ করেছিলেন, তাহলে ফররুখ আহমদের অপরাধটা কোথায়? বলা হয়ে থাকে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে তিনি অনেকবেশি সাম্প্রদায়িক বিষোদগার করেছিলেন। সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সমস্ত প্রমাণ এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের সমস্ত লেখক-কবি-সাহিত্যিক সাম্প্রদায়িকতার প্রচারে কে কার চাইতে বেশি যেতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করেন আমরা দেখিয়ে দিতে পারি। মানুষের স্মৃতি এত দুর্বল নয় যে, হিং টিং ছট ইত্যাদি প্রোগামগুলো ভুলে গেছে। ঐ সমস্ত প্রোগ্রাম যারা করেছে সংস্কৃতির সে সকল কলমধারী গুণ্ডারা বাংলাদেশে বুক চিতিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির আসন দখল করে আছে কি আশ্চর্য। চাকরি হারাবেন, না- খেতে পেয়ে মারা যাবেন এক ফররুখ আহমদ।
এতসব দোষের মধ্যেও ফররুখ আহমদের কতিপয় গুণের কথা আমরা না-উল্লেখ করে পারছিনে। সেপ্টেম্বর যুদ্ধের পরে কবি ফররুখ আহমদকে যখন প্রাইড অব পারফরমেন্স দেয়ার কথা ওঠে, তিনি অস্বীকার করেছিলেন। আমরা শুনেছিলম, তিনি বলেছিলেন, একজন কবির ক্ষমতাদর্পীর হাত থেকে নেয়ার কিছুই নেই। খবর পেয়েছিলাম, সে প্রাইড অব পারফরমেন্স এমন একজন সাহিত্যসেবীকে দেয়া হয়েছিল এখন যত্রতত্র তাঁর শোকসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি দলের সকলে তাঁর কথা মনে করে শোকাশ্রু বর্ষণ করছেন। মজার কথা হল, তিনিও দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সপক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। যাকে নিয়ে এত লাফালাফি তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ হয়ত কারাগারেই থাকতেন। আমাদের কথা হল, ফররুখ আহমদের মত একজন শক্তিমান স্রষ্টার চাকরি কেড়ে নেয়া, সপরিবারে তাঁকে মৃত্যু-যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করার পেছনে ন্যায়-নীতিসঙ্গত যুক্তিটা কি হতে পারে?
আমরা বাংলাদেশের আরো একজন খ্যাতনামা কবির কথা জানি (কবি শামসুর রাহমান)। যিনি পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকটির (দৈনিক পাকিস্তান) সম্পাদকীয় রচনা করেছিলেন। ঐ পত্রিকার চাকরি করেন আর একজন কবি সম্পর্কে কানা-ঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, তিনি পাকিস্তানি মেজর ক্যাপটেনদের সাহায্যে নাম ভাঙ্গিয়ে লাহোর করাচি ছুটোছুটি করেছেন। কেউ যদি আমাদের বক্তব্যকে অসত্য মনে করেন, বাস্তব প্রমাণ দাখিল করতে পারব।
আহমেদ ছফা কবি ফররুখ আহমদ সম্পর্কে আরো লিখেছেন, ‘একজন আত্মমর্যাদা জ্ঞানসম্পন্ন কবি’। এ ধরনের অবিচার আমাদের এ বাংলাদেশেই হওয়া সম্ভব। প্রসঙ্গত ভূতপূর্ব পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার কুখ্যাত বার্তা-সম্পাদক এবিএম মুসার নাম বলতে পারি। এই মুসা সাহেব মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোলকাতায় যেয়ে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করেছিলেন, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মন থেকে সে স্মৃতি এত তাড়াতাড়ি মুছে যায়নি। মুছে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমিক সম্মানটি দিতেও রাজি ছিলেন না।
হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে তাদের রেবেল বলে অবহিত করেছিলেন। সেই মুসা সাহেব এখন বাংলাদেশের সংসদ-সদস্য (আওয়ামী লীগের)। ফররুখ আহমদের অপরাধ শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়ায় যে, তিনি অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের মতো স্লোগান বদল করতে পারেননি। সত্ কবিরা অনেক সময় ধরতাই বুলিতে গা ঢেলে দিতে পারেন না। সেটাই তাদের একমাত্র অপরাধ। কবি ফররুখ আহমদও এই একই অপরাধে অপরাধী।

অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক যাদের কোন রকমের আদর্শবোধ নেই, চরিত্র নেই, সুবিধেটাই নীতি। আমরা জানি, তারা আজ ফররুখ আহমদের নামে দুটো সমবেদনার কথা কইতে কুণ্ঠাবোধ করেন। তারপরেও আমরা মনে করি ফররুখ আহমদ একজন বীরচরিত্রের পুরুষ। একজন শক্তিমন্ত কবি। ফররুখ আহমদের রুটি রোজগারের পথ খুলে দিতে আবেদন করার কোন সার্থকতা নেই। কেননা, এবিএম মুসা সাহেবের মত মানুষেরা এই সরকারের সংসদ-সদস্য, হি টিং ছটের কলমধারী গুণ্ডারা এই সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণাদাতা। তাদের যদি বিবেক থাকত, যদি সাহিত্যে এবং সাহিত্যিকদের প্রতি প্রেম থাকত কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যেত না। কবিকে বৃদ্ধ বয়সে উপোস করতে হত না। আমরা ফররুখ আহমদকে বাঁচাবার জন্য, তার পরিবারকে বাঁচাবার জন্য ‘ফররুখ আহমদ সাহায্য তহবিল’ গঠন করার জন্য কবির অনুরাগীজন এবং দেশপ্রেমিক, সংস্কৃতিপ্রেমিক জনগণের কাছে আবেদন রাখছি।’ আহমদ ছফার এই শত ভাষণের প্রতিফলন স্বাধীনতার প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরও প্রতিনিয়ত সচেতন দেশপ্রেমিক মানুষকে পীড়া দিয়ে যাচ্ছে।

Tuesday, April 24, 2018

একটু ভাবুন... (২)


পূর্ব তিমুর।কিছুদিন পূর্বেও এটি ছিল বর্ত্তমান বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়ার একটি সমৃদ্ধ প্রদেশ। এখানেও একসময় মুসলিম জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এরপর রহস্যময় এক কারণে দিন-দিন খৃস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল। এক সময় এই প্রদেশটিকে ঘিরে উঠলো স্বাধীন খৃস্টানরাজ্যের দাবী! অতঃপর বিদ্রোহ ও সংঘর্ষ।

 ২০০৩। মার্চ মাসের ২০ তারিখ। সারা বিশ্বের মানুষ একটি আশ্চর্য সংবাদ শুনলো - "জাতিসংঘের নগ্ন হস্তক্ষেপে স্বাধীনতা লাভ করেছে পূর্ব তিমুর! বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের হৃদপিণ্ডের উপর গজিয়ে উঠেছে এক স্বাধীন খৃস্টানরাজ্য!!''
















কিন্তু তারপর?? তারপর কী হয়েছিল সেখানে?? 
স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েক ঘন্টা সেখানে মুসলিম জনসাধারণের উপর বয়ে গিয়েছিল গণহত্যার এক অচিন্তনীয় ঝড়। মাত্র দু'ঘন্টায় গণহত্যার শিকার হতে হয়েছিল ১০ হাজারের অধিক মুসলমানকে!!! যে গণহত্যা থেকে রক্ষা পায়নি সেদিন মুসলিম মায়েদের গর্ভে থাকা বাচ্চাটি পর্যন্ত! 
কেন হয়েছিল এমনটি? 
কী ছিল সেই রহস্যময় কারণ; যার কারণে দিন-দিন সেখানে খৃস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল??
   পূর্বের অংশ                                                      চলবে

Monday, April 23, 2018

একটু ভাবুন...



স্পেন।আরবরা যাকে আদর করে বলতো আন্দালুসিয়া। ঈসায়ী অষ্টম শতাব্দীর শুরু থেকে নিয়ে পনের শতকের শেষ পর্যন্ত যে দেশটির পরিচয় ছিল মুসলিম স্পেন নামে। ১৬১০ খৃস্টাব্দে মুসলিম পরিচয় ধারণকারী সর্বশেষ লোকটিকে সে দেশ থেকে বের করে দেয়ার পূর্বে  সূদীর্ঘ আট শতাব্দী পর্যন্ত যে দেশের বৃহত জনগোষ্ঠী ছিল মুসলমান। ততকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ "কর্ডোভা জামে মসজিদ" আজো আর বুকে দণ্ডায়মান। যে ভূমির আলেমসমাজ এক সময় নেতৃত্ব দিয়েছিল সমগ্র ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানের


এ বাংলার মত যার প্রতিটি রাতের সমাপ্তি ঘটতো একসময় আল্লাহু আকবারের সুমধুর ধ্বনিতে।এ দেশের ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মাদ বখতিয়ার  শাহজালাল ও শাহ পরানের মত লাখো শহীদ-গাজী,পীর-আউলিয়ার দেহ মিশে আছে আজো যে দেশের মাটিতে।
তারপরও....,? 
এত কিছুর পরও সে দেশ থেকে কেন আমাদেরকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল???

“জীবন থেকে নেয়া” থেকে”স্টপ জেনোসাইড” আর একজন জহির রায়হান


 ঙ্গভূমিতে জন্মলাভ করে শত বাধার মাঝে বেড়ে উঠতে হয়ে উঠেছিলো বাংলার এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের।তার নামের পরে ছিলো অনেক গুলো পরিচয়।কখনো গল্পকার,কখনো ঔপন্যাসিক কিংবা চলচ্চিত্র পরিচালক।তার কাজগুলো এমনই ছিলো যে আজ ৪ দশক পরে এসেও আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি মাথা উঁচু করে,আর এদেশের ইতিহাস আজো তার কাজের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য।


.
জীবনের অধ্যায়ের কোন পরিচ্ছেদেই তাকে থেমে থাকতে হয়নি কোথায়ও কোন দিন।জীবন অধ্যায়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদে প্রতিটি পরিচয়ে নিজেকে রাঙিয়েছেন নিজের মত করে যেখানে আজো তাকে ছুঁতে পারেনি কেউ।তিনি ছিলেন শুধুই একজন,আমাদের একজন জহির রায়হান।
.
একুশের গল্পের তপু আর আমাদের জহির রায়হান,লেখক নিজেই যেন লিখে গিয়ে ছিলেন নিজের ভাগ্যকাব্য।গল্পের তপুর মতই সদা মুখে এক ঝলক আঠার মত হাসি লেগে থাকতো তার।গল্পে তপু যেমন সবাইকে হাসাতে পারতো জহির রায়হান ঠিক তেমনি করে হাসিয়েছিলেন জীবন থেকে নেয়া ছবির মাঝে আর গল্পটাও জমিয়েছিলেন গল্পের তপুর মত করেই।
.
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত নোয়াখালীর মজুপুর গ্রামে জন্মছিলেন তিনি।১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন।১৯৫০ আমিরাবাদ হাইস্কুল (ফেনী) থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দেন তিনি সেই বছরই তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন।
.
পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া,যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন।১৯৫১ কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সরাসরি জড়িত হয়ে পরেন।স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢুকে পড়েন কলেজের গন্ডিতে,ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ছাত্র অবস্থাতেই ৫২র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন,উপস্থিত ছিলেন ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল তা প্রমাণ আমরা দেখতে পাই তার পরের জীবনের পরিচ্ছেদ গুলোতে।
.
১৯৫৩ ঢাকা কলেজ থেকে আই.এস.সি পাশ করে ভর্তি হন চিকিৎসাশাস্ত্রে।১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ "সূর্যগ্রহণ" প্রকাশিত হয়।১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন।৫৮ সালে ত্যাগ করেই চিকিৎসাশাস্ত্র পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি করেই সেই শুরু আর থেমে থাকা হয়নি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাজ আর জীবন ২টি একই ভাবে বয়ে চলছিল তার হাত ধরে।
.
চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান, জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন।১৯৬০ সালে তার প্রথম উপন্যাস শেষ বিকেলের মেয়ে প্রকাশ পায়।
.
১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।এই ছবির মধ্য দিয়েই চিত্রনায়িকা হেনা লাহিড়ী সুমিতা দেবীর সাথে পরিণয় হয় তার। ৬২ও৬৩ সালে তিনি সোনার কাজলকাঁচের দেয়াল(নিগার পুরস্কার লাভ শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে)নামে ২টি চলচিত্র নির্মান করেন।১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি)এবং একই বছর হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য আদমজী পুরস্কার লাভ করেন।
.
পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন।১৯৬৮ চিত্রনায়িকা কোহিনূর আকতার সুচন্দার সাথে পরিণয় হয়।তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন, সেই বছরই প্রকাশ পায় তার আরো ২টি উপন্যাস”আরেক ফাল্গুন”(বায়ান্নর রক্তস্নাত ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত কথামালা)বরফ গলা নদী (অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যস্ত ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্ব গাঁথা)।১৯৭০ সালে নির্মাণ করেন তার অমর চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেওয়া”।
.
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।
.
নির্মাণ করতে থাকে মুক্তিযুধের উপর একের পর এক ছবি ।১ম প্রকাশ করা চলচ্চিত্র”স্টপ জেনোসাইড” বিশ্ব দরবারে জানান দেন আমাদের প্রতি অবিচারের,জানিয়ে দেন নিরিহ বাঙালিদের উপর গণহত্যার সেই সব কথা গুলো।নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এ “স্টেট ইজ বর্ন” এবং সবশেষ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ৩য় চলচ্চিত্র “ইনোসেন্ট মিলিয়ন”(পরিচালকঃ বাবুল চৌধুরী)এবং লিবারেশন ফাইটার্স (পরিচালকঃ আলমগীর কবীর)-এর তত্ত্বাবধান।
.
তারপর দেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরেই ১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠন করেন।পরে তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানী আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন।১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারী ভাইয়ের সন্ধানে মীরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি জহির রায়হান। মীরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
.
তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য গল্পগুলো হলো সোনার হরিণ,সময়ের প্রয়োজনে,একটি জিজ্ঞাসা,হারানো বলয়,বাঁধ,নয়াপত্তন,মহামৃত্যু,ভাঙাচোরা,অপরাধ,স্বীকৃতি্‌,অতি পরিচিত,ইচ্ছা অনিচ্ছা,জন্মান্তর,পোস্টার,ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি,কতকগুলো কুকুরের আর্তনাত,সংলাপ,দেমাক,ম্যাসাকার,একুশের গল্প এবং উপন্যাস আর কত দিন,কয়েকটি মৃত্যু,একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি।তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ,৭৭ সালে চলচ্চিত্রে মরণোত্তর একুশে পদ,১৯৯২ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।
.
গল্পের তপুকে শেষ দেখা গিয়েছিলো হাইকোর্টের মোড়ে আর আমাদের তপুর স্রষ্টাকে মিরপুরে বিধাতার কি অদ্ভুত মিল গল্পের তপুর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি চার বছর।পরে খুঁজ মিলেছিলো তার কঙ্কাল ঠিক তেমত করেই চার দশক পরে তপুর স্রষ্টার খোঁজ মিলেছিলো নিথর কঙ্কালে।
.
এরপর এই স্বাধীন বঙ্গে অনেক ২১ এলো গেলো কেউ আমাদের জহির রায়হানের মত করে একুশের গল্প বলেনি,বলেনি হারিয়ে যাওয়া তপুকে খুজে পারাব কথা কোন পড়ন্ত বিকেলে।কত বিকেলে সবুজ ঘাসের গালিচায় আমি তপুকে রেণুর সাথে আঁকার চেষ্টা করেছি,কিন্তু পারিনি।শত ছবির মাঝে খুজে ফিরে আজো জহির রায়হান এর ছায়া খুজে পাইনি,হয়তো আর পাবো ও না আর কোন দিন।
.
জহির রায়হান এই বঙ্গের শত শত সন্তান হাজারো কাজের মাঝে তোমাকে যে খুজে ফিরে আজো সে কথা তুমি জানো কিনা জানি না, শুধু প্রার্থনা ; যেখানেই থাকো ভালো থাকো।২১ এর গল্পের হারিয়ে যাওয়া তপুর মত করে তোমাকে খুঁজে পাবো কোন এক শেষ বিকেলে সেই আশা করি না তবে যদি আবার কোন দিন এই বঙ্গে তপুর স্রষ্টা ফিরে আসতো।

Saturday, April 21, 2018

তপ্ত বালু


খু ব বলতে ইচ্ছে করছে।
 অনেক লেখতেও ইচ্ছে করছে।
বহু কথা জমা আছে।
হাতে মাশাল্লা জোড়ও আছে।
তবুও লিখবো না।
কিছু বলবো না! 

কীভাবে বলবো?! 
কী করে লিখবো?! 
কারবালার নির্মম কাহিনী লেখা হয়েছিল বলে ইতিহাস আজও সেই নির্মমতাকে সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আমার এই কষ্টের কাহিনী হয়ত কোথাও লেখা হবে না।কিন্তু আজীবন আমার হৃদয়ে আজকের এই কারবালার ঘটনাটা মরুসাইমুমের তপ্ত বালু উড়িয়ে যাবে।
লেখক: মাহবুব বিন হাবীব

Thursday, April 19, 2018

আমি স্বাধীন




 জ আমি নির্ভয়।
 আজ আমি স্বাধীন।
আজ আমি নিঃশ্বাস নেব মুক্ত বাতাসে।
স্বাধীনভাবে।
আজ তুমি আর পারবে না আমার কণ্ঠরোধ করতে,পারবে না অপরাধের শৃঙখলে আবদ্ধ করতে। 
হয়ত তুমি ব্যর্থ চেষ্টা করতে পারো,তবে কোনো লাভ হবে না।

কারণ আজ যে আমি মুক্ত। 
আজ যে আমি স্বাধীন। 
এই স্বাধীনতার অপেক্ষায় কেটে গেছে কতগুলো দিন!! কিন্তু পারিনি; অন্ধকার পঁচা আর স্যাঁতস্যাঁত ওই প্রকোষ্ঠেই আমাকে ধিক্কারের বোঝা নিয়ে দিন পার করতে হয়েছে।
লেখক: মাহবুব বিন হাবীব

Monday, April 16, 2018

আধুনিক ভালোবাসা


বন্ধুত্ব এখন ফ্যাশন। ভালোবাসা ফ্যাশনেবল আইটেম। পাঁচ-ছয়জন বন্ধু না নিয়ে ঘুড়লে যেন ব্যক্তিত্বই যাহের হয় না।আপনি যে কেউকেটা, এটা বোঝানোর জন্য দশ-পনেরোজন বন্ধু নিয়ে না ঘুড়লে হয়! সবার বন্ধু আছে আপনারও একটা থাকা প্রয়োজন। ব্যস! হ্যান্ডসাম দেখে একটা মানুষ খুঁজে  আর পকেটে "মালটাল" থাকলেতো কথাই নাই। ফূর্তি করো। মাস্তি করো।টাইম পাছ।
বন্ধুতে বিপদে পড়েছে; হয়ত চক্ষুলজ্জায় এতটুকু বলতে পারে;-খোদার কাছে দোয়া কর,টেনশন নিছ্না। 
অথবা এতটুকুও নাও বলতে পারে। 
আবার সন্ধান।নতুন কোনো মালদার বন্ধুর খোঁজে.........


এবার আসা যাক কপোত-কপোতির কথায় .... 
"আমি তোমাকে আমার প্রাণের চাইতেও বেশী ভালোবাসি~~~~~ "
"লক্ষীটি রাগ করে না ~~~~~"
" যতদিন এদেহে প্রাণ আছে, ততদিন এ দেহমন জুড়ে শুধু তুমি~~~~" 
বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনাপার্ক,টিএসসি মোড়ে কান পাতলে ইথারে ভেসে আসা এরকম হাজারো লাইলি-মজনু মার্কা কথা শুনতে পাবে।তুমি হয়তো ভাবতে পারো, যে দেশে "যত্রতত্র" ভালোবাসার ছড়াছড়ি সে দেশে কি ডিভোর্সের মত ঘটনা, স্ত্রী স্বামীকে গলাটিপে হত্যা,প্রেমিক প্রেমিকাকে সাতাশ টুকরো করার কত জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারে!!! অসম্ভব!!! 
আরে! যদি এই সমস্ত মানুষগুলোর অন্তর খুলে তোমার সামনে রাখা হয়,তাহলে.... বমি করবে!!
লেখক :মাহবুব বিন হাবীব

Saturday, April 14, 2018

মধ্যম আয়ের দেশ


বাংলা ১৩৫০ সনের দুর্ভিক্ষ আমি দেখিনি, দেখিনি ঘড়ের লজ্জাবতি নারীদের চুরি করতে,শুনিনি সরকারী লঙ্গরখানায় কঙ্কালসার মানুষদের চেঁচামেচি।
পাইনি ক্ষুধায় মরে যাওয়া পঁচা লাশের গন্ধ।
তবে আমি পড়েছি; পড়েছি আর অনুভব করেছি।
লজ্জা পেয়েছি ঘরের ঝি-বউরা পর্যন্ত ছিচকে চুরির করার জন্য।
 শুনেছি লঙ্গরখানায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের চেঁচামেচি।
মানুষ পঁচার গন্ধও আমি পেয়েছি।



 রাস্তায় নেমে হাত পেতে থাকা কঙ্কালসার বাচ্চাটিকে দেখে মেলাবার চেষ্টা করেছি!!
 ফলাফল ; পার্থক্য পাইনি।শুধু এতটুকু ;সেটা ১৩৫০ আর এটা ১৪২৫। 
তখন শোষক ছিল ইংরেজ ফিরিঙ্গিবাজ এখন শোষক হলেন স্বদেশীয় বাঙ্গালি। 
কিন্তু আফসোসের কথা ; লোকে জানে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হয়েছি।

Friday, April 13, 2018

হরেকরকম ভালোবাসা


মানুষ ভালোবাসার পাগল। মানুষ কাউকে না কাউকে ভালবেসে জীবন বাঁচার স্বপ্ন দেখে। কেউ বাবাকে ভালোবাসে কেউ আবার মাকে,কেউ আবার স্বপ্ন দেখে আদরের ছোট্ট বোনকে নিয়ে। কেউ আবার গুদুসুদু ভাইকে নিয়ে।কেউ জীবন সাজায় পাশের বাড়ির ভদ্র ছেলে রহিম কে নিয়ে।কেউ আবার গলির বখাটে ছেলে মন্টুকে নিয়ে।কেউ জীবন ধারনের খোরাক খুঁজে পায় গাছের মাঝে কেউ আবার দালানের মাঝে।কেউ পাখিকে আবার কেউ বিড়ালকে নিয়ে।কেউ ভালোবাসে এসমস্ত কিছুর স্রষ্টা আল্লাহকে।

সবাই ভালোবাসে, কাউকে না কাউকে ভালোবাসে, তবে এই হরেকরকম ভালোবাসার শেষটা কোথায়?

ভালোবাসা মানেই কি ভালোকিছু?আপনার ভালোবাসার শেষ পরিনামটা নির্ভর করবে আপনার ভালোবাসার মানুষ বা বস্তুটির উপর; আপনি বাবাকে ভালোবেসে তার খেদমত করে যান,দুনিয়াতে অনাহারের কষ্ট পাবেন না আর আপনি যদি সকল কিছুর স্রষ্টা মহান রবের প্রেমে পড়ে যান তাহলে গোটা দুনিয়াটাই আপনার। আর জান্নাত....

আজ দুনিয়াতে ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের ছড়াছড়ি ; বাসস্ট্যন্ডে,কলেজ ক্যম্পাসে,রাস্তার মোড়ে। জেনারেল স্টোরে গড়ে উঠছে হাজারো বন্ধুত্ব, ফুঠছে কতশত ভালোবাসা, কিন্তু কিছুদিন পরে এদের অবস্থান হচ্ছে রমানাপার্ক,সংসদ ভবন বা হোটেল গুলোতে,এর কিছুদিন পর এদের অবস্থান হয়......
সেদিন আমাকে কেউ একজন আফসোস করে বললোঃআহ্!পৃথিবীতে এখন ভালোবাসা নেই!!
আমি খুব অবাক হলাম; তাহলে ক্যাফেতে বন্ধুদের আড্ডা আর ক্যাম্পাসের মাঠে গানের আড্ডার বন্ধুদের কি তার কাছে বন্ধু মনে হয় না! বোটানিক্যাল গার্ডেন আর রমনা পার্কের বেঞ্চে বেঞ্চে কপোত-কপোতির খোলামেলা সম্পর্কেও কি তার কাছে ভালোবাসা মনে হয় না!!
তার মতে এটা নাকি "ভালোবাসি" বোঝানোর একটা নিদর্শন।
অবাক হলাম।গোলকধাঁধায় পড়লাম।
ভালোবাসাটা আসলে কী!! এর শেষ পরিণতি কোথায়!?
রেস্টুরেন্টে এক মগে কফি কোল্ড কফি খাওয়ার নামই কী বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা!!?
অথবা কোনো পার্কে বা নির্জনে লজ্জার আবরণকে ছিঁড়ে ফেলে দুটি ঠোঁট, দুটি নাক বা দুটি শরীর মিলে একাকার হয়ে যাওয়ার নামই কী ভালোবাসা.....
লেখক : মাহবুব বিন হাবীব 

Monday, April 9, 2018

ক্ষণিকের ভালোবাসা



ভালোবাসার মাঝে চিড়-ফাটল তখনই সৃষ্টি হয় যখন ভালোবাসার মানুষটি চরমভাবে অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত হন।তাই ফাটল সৃষ্টির প্রকৃত কারণ না জেনে ভালোবাসার মানুষটিকে ভুল বুঝা আদৌ উচিৎ নয়।ভালোবাসা অটুট রাখতে উভয়েরই সমান ভূমিকা রাখা চাই।
লেখক : মাহবুব বিন হাবীব

মুসলিম উম্মাহ্‌র অধঃপতনে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা

"এক জাতি, এক ভূমি"- এই চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একদা যে মুসলিম উম্মাহ্‌ পরিণত হয়েছিল বিশ্বের প্রভাবশালী সভ্যতায় সেই একই ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ